তানভীর চৌধুরী, ফুলগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘কী অপরাধ ছিল আমার সন্তানের’

কবি নজরুল কলেজে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউছার। ছবি : সংগৃহীত
কবি নজরুল কলেজে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউছার। ছবি : সংগৃহীত

‘আমার ছেলে কী দোষ করেছে, আমার নিষ্পাপ নিরপরাধ ছেলেটাকে কেন গুলি করে মারা হলো? আমি কার কাছে বিচার দেব।’ আদরের সন্তানকে হারিয়ে এভাবেই বুক চাপড়ে কাঁদছেন কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের সময় নিহত মেধাবী শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউছারের বাবা মাওলানা আনোয়ার হোসেন (৫০)।

গত ১৯ জুলাই জুমার নামাজ আদায়ের পর বন্ধুদের সঙ্গে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে যোগ দেন ফেনীর পরশুরাম উপজেলার রাজেশপুর গ্রামের ইকরাম হোসেন কাউছার। তিনি ঢাকা কবি নজরুল কলেজে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন।

নিহতের ছোট ভাই ফারুক হোসেন বলেন, গত ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে কবি নজরুল কলেজ সংলগ্ন লক্ষ্মীবাজার এলাকায় একটি বুলেট মাথায় লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আমার ভাই। সেখান থেকে সংকটাপন্ন অবস্থায় এক ভ্যানচালক আমার ভাইকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ওই ভ্যানচালক আমার বাবার নম্বরে কল দিয়ে ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদটি জানান। আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।

নিহত শিক্ষার্থী কাউছারের বাবা মওলানা আনোয়ার হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে ভারি বস্তু পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন-আশা ছিল; ঘাতক একটি বুলেট সব নিমিষেই শেষ করে দিল। আমার সন্তান হত্যার বিচার আমি কার কাছে দিব। ছাত্রদের এই আন্দোলনে আমার মতো অনেক বাবা সন্তান হারিয়েছে। আপনজন হারানোর বেদনা কাউকে বলে বুঝানো যাবে না। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, নিশ্চয়ই আল্লাহ সঠিক বিচার করবে। নিহত শিক্ষার্থী কাউছারের প্রতিবেশী (চাচা) দন্ত চিকিৎসক ডাক্তার আবদুল কাদের সম্রাট বলেন, কাউছার আমাদের চোখের সামনে ছোট থেকে বড় হয়েছে। সে অত্যন্ত ভদ্র এবং বিনয়ী স্বভাবের ছিল এবং খুব মেধাবী ছিল। আসলে এভাবে ছেলেটার মৃত্যু হবে তা ভাবতেই বারবার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। পরিবারের বড় ছেলে কাউছার; তাকে নিয়ে ওর মা বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল কিন্তু কী থেকে কি হয়ে গেল। ছেলেটার এমন মৃত্যুতে পুরো এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আমরা সরকারের কাছে তদন্তসাপেক্ষে এই হত্যার বিচার চাই।

এ বিষয়ে পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সংঘর্ষে পরশুরামের রাজেশপুর এলাকার কাউছার নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে- এমন একটা সংবাদ আমরা পেয়েছি। নিহত কাউছারের বাবা মাওলানা আনোয়ার হোসেন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক।

এদিকে আদরের সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ নিহত শিক্ষার্থী কাউছারের মা রুমি আক্তার (৪২)। সন্তানের শোকে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। যখনই হুঁশ ফিরছে তখনি কাউছার কাউছার বলে বিলাপ করছেন। কাউছারের মায়ের আর্তনাদ দেখে আশপাশ থেকে দেখতে আসা প্রতিবেশীরাও কাঁদছেন। মাওলানা আনোয়ার হোসেন ও রুমি আক্তার দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড় ইকরাম হোসেন কাউছার। গত ১৯ জুলাই সংঘর্ষে নিহত শিক্ষার্থী কাউছারের মরদেহটি গত ২০ জুলাই রাত ৯টায় পরশুরামের রাজেশপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: কোটা সংস্কার আন্দোলন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধে প্রতিশ্রুতি আমিনুল হকের

শেখ হাসিনা ও কামালের আপিল করার সুযোগ নিয়ে যা জানা গেল

যুবদলের এক নেতা বহিষ্কার

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে : খন্দকার মোশাররফ

রাজধানীর ২ স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ দুর্বৃত্তদের

ভয়াবহ আগুনে পুড়ল ৭ দোকান

শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুনের ধোঁয়া, যাত্রীরা আতঙ্কিত

চট্টগ্রাম বন্দরে রুশ যুদ্ধজাহাজ

১০

রায় ঘোষণার পর আ.লীগ অফিসে আগুন

১১

আখাউড়ায় শ্রমিক লীগ নেতা গ্রেপ্তার

১২

‘ভুডু’ বিতর্কে থামল নাইজেরিয়ার বিশ্বকাপ স্বপ্ন

১৩

‘দুই প্রক্রিয়ায় ভারতকে চিঠি পাঠাবে বাংলাদেশ’

১৪

রায় মনে করিয়ে দিয়েছে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় : রব

১৫

ধানের শীষের বিজয় মানেই মানুষের মুক্তি : মান্নান

১৬

টাকার বিনিময়ে মিছিল করতে গিয়ে ধরা

১৭

এসএমসি এন্টারপ্রাইজকে ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট সেবা দেবে প্রাইম ব্যাংক

১৮

ব্যাংকক ম্যারাথনে চ্যালেঞ্জ জয় করে বাংলাদেশের পতাকা উড়ালো নাহিদ

১৯

শাওনকে ‘ভারতীয় গুপ্তচর’ আখ্যা দিয়ে কঠোর শাস্তির দাবি

২০
X