বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও চলমান কারফিউয়ের কারণে পদ্মা সেতুতে উল্লেখযোগ্য হারে টোল আদায় কমেছে। চলমান পরিস্থিতির কারণে পদ্মা সেতু থেকে প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি টাকা কম টোল আদায় হচ্ছে বলে জানান সেতু কর্তৃপক্ষ।
সেতু কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে পদ্মা থেকে হয়ে গড়ে প্রতিদিন ১৯ হাজার ১৬৮ যান পারাপার হতো। এতে গড়ে প্রতিদিন টোল আদায় হতো ২ কোটি ৩২ লাখ টাকারও বেশি। তবে বর্তমান কারফিউয়ের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে প্রায় তিন হাজারের মতো। যা থেকে টোল আদায় হচ্ছে প্রায় ৪০ থেকে ৪৬ লাখ টাকা। এর ফলে চলমান পরিস্থিতির কারণ প্রতিদিন পদ্মা সেতু থেকে রাজস্ব কমেছে প্রায় ২ কোটি টাকা।
গত এক বছরে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হজারে ২৭৫টি। যার মাধ্যমে টোল আদায় হয়েছে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ৩০০ টাকা। প্রথম বছরে গড়ে ১৫ হাজারেরও বেশি যানবাহন পারাপার হলেও দ্বিতীয় বছর থেকে গড়ে ১৯ হাজারের ওপরে যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ২ কোটি ৩২ লাখ টাকারও বেশি টোল আদায় হয়েছে।
পদ্মা সেতু সাইট অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আমিরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, গত ১৮ জুলাই থেকে কারফিউ শুরু হওয়ার পর যানবাহন অনেক কমে গেছে। ফলে রাজস্ব আদায়ও কমে হচ্ছে। ২০ জুলাই যানবাহন পারাপার হয় চার হাজার ৪৪৪টি, ২১ জুলাই ছিল চার হাজার ৭০৬টি। ২১ জুলাই পদ্মা সেতুতে সর্বনিম্ন ৪৬ লাখ টাকা টোল আদায় হয়েছে। যেখানে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ১৯ হাজার ১৬৮ যান পারাপারে টোল আদায় হতো ২ কোটি ৩২ লাখ ১৪ হাজার ২২২ টাকা। অতীতে ২ কোটি টাকার নিচে টোল আদায় হয়নি। এতে নিঃসন্দেহে প্রতিদিন অন্তত ২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বাংলাদেশ সরকার ও পদ্মা সেতু বঞ্চিত হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ নাগরিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুজন হায়দার জনি বলেন, কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশে যখন সহিংসতা তৈরি হয় তখন থেকেই দেশের মানুষ ভীতিকর পরিস্থিতিতে রয়েছে। সাধারণ মানুষ খুব প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ভ্রমণ, বিনোদন তো একেবারেই বন্ধ। পুরো দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনে গতির ছন্দপতন ঘটেছে। এতে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে যাওয়ায় সঙ্গত কারণে পদ্মা সেতুতে তার বড় প্রভাব পড়বে সেটাই স্বাভাবিক। তবে পরিস্থিতি যেহেতু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে সেহেতু পদ্মা সেতু হয়ে পুনরায় যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।
পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সেতুর স্থলভাগ ছাড়াও নৌপথেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নদীতে নৌপুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। সড়কে পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় এক চুল ছাড় দেওয়া হবে না। তবে বর্তমান পরিস্থিতির কারণে যানবাহন চলাচল অনেকটাই কম। তবে আশা করা যায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আবার প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিয়ে আসবে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে।
মন্তব্য করুন