রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাজশাহীর ডিসির উদ্যোগে এগিয়ে যাচ্ছে সোনিয়া ও আঁখি 

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। ছবি : কালবেলা
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। ছবি : কালবেলা

সোনিয়া খাতুন। রাজশাহী নগরীর ছোট বনগ্রাম এলাকার মৃত আলী হোসেন ভূঁইয়ার মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে সোনিয়া ছোট। গত বছর নার্সিংয়ে ভর্তির সুযোগ পান সোনিয়া। কিন্তু সুযোগ থাকলেও পিতৃহারা সোনিয়ার ছিল না নার্সিংয়ে ভর্তির সম্বল। তাই গত ফেব্রুয়ারিতে সোনিয়া শরণাপন্ন হন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদের। মানবিক ডিসি কোনো কালবিলম্ব না করে সোনিয়ার নার্সিংয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে তিনি চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে অধ্যায়নরত।

নুসরাত জাহান আঁখি। রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৃত আক্কাস আলীর মেয়ে। তিন বছর বয়সে ২০০৩ সালে আঁখি তার বাবাকে হারান। অনেক কষ্ট হলেও বাবাহারা আঁখির পড়ালেখার হাল ধরে রাখেন মা নূরেসা বেগম। ডিসি শামীম আহমেদের সহযোগিতায় আঁখি এখন নগরীর চন্দ্রিমা এলাকার বারিন্দ কলেজ অ্যান্ড নার্সিং সায়েন্সের বিএসসি নার্সিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তার সহায়তায় আঁখি নার্সিংয়ে পেয়েছেন ফ্রিতে পড়ালেখার সুযোগ। শুধু সোনিয়া কিংবা আঁখি নন; এমন শতশত সোনিয়া-আঁখি ডিসির সহযোগিতায় করছেন পড়ালেখা। উজ্জ্বল করার স্বপ্ন দেখছেন দেশের মুখ। আর এভাবেই শতশত অসহায় শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পরিস্ফুটিত করে রাজশাহীর ডিসি শামীম আহমেদ যেন মানবিকতার ‘ফেরিওয়ালা’ হয়েছেন।

রোববার (২৮ জুলাই) দুপুরে আঁখি ও সোনিয়া নতুন এক আবেদন নিয়ে এসেছিলেন ডিসি অফিসে। দুজনের সঙ্গেই প্রতিবেদকের কথা হয়।

ডিসি অফিসে কেন এসেছেন জানতে চাইলে আবেগতাড়িত হয়ে সোনিয়া বলেন, ‘২০১৭ সালে বাবা মারা যান। আমরা দুই বোন। দুই বোনের ভরণ-পোষণ আর পড়ালেখার খরচ চালাতে মাকে খেতে হয় হিমশিম। তার পরও হাল ছেড়ে দিইনি আমরা। বড় বোন জান্নাতুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে অধ্যয়ন শেষ করেছেন। আমি ডিসি স্যারের আর্থিক সহযোগিতায় পড়ছি চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে।’

সোনিয়া বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি নার্সিংয়ে পড়ার সুযোগ পাই। কিন্তু ভর্তি টাকা ছিল না। নির্দ্বিধায় চলে আসলাম ডিসি স্যারের কাছে। স্যার ভর্তির জন্য সঙ্গে সঙ্গে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে দিলেন। এরপর যখন এসেছি স্যার আমাকে সহযোগিতা করেছেন। হোস্টেলের থাকা-খাওয়া আর বই কেনার জন্য টাকার প্রয়োজন, এজন্য আজ একটি আবেদন নিয়ে এসেছি। স্যার স্থায়ী একটি ব্যবস্থা করলেন।’

তিনি বলেন, ‘স্যার (ডিসি) আর্থিক সহযোগিতা করলেন। পাশাপাশি জেলা পরিষদ থেকে প্রতি মাসে কিছু টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। স্যারের কারণেই আমি এতদূর আসতে পেরেছি। আমি স্যারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’

আরেক শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান আঁখি বলেন, ‘অত্যন্ত গরিব ঘরে জন্ম আমার। তিন বছর বয়সে বাবাকে হারাই। মা সেলাই মেশিনের কাজ করে বড় ভাই ও আমাকে লালন-পালন করছিলেন। কিন্তু দুশ্চিন্তায় মায়ের শরীরে আস্তে আস্তে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে। হন শয্যাশায়ী। তবুও ছাড়িনি পড়ালেখার হাল। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু বাস্তবায়ন না হলেও শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্টে ভর্তি হয়েছি বিএসসি নার্সিংয়ে। ভর্তির পর টাকার অভাবে টিউশন ফি দিতে পারছিলাম না। চলে এলাম আমার একমাত্র অভিভাবক ডিসি স্যারের কাছে।

তিনি আমার কলেজের এমডি স্যারের সঙ্গে কথা বলে দুই বছরের ৬০ হাজার টাকা বেতন (টিউশন ফি) মওকুফের ব্যবস্থা করলেন। শুধু তাই নয়, ডিসি স্যার আমাকে বিভিন্ন সময় আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি নিজে ফোন করে পড়ালেখার খোঁজখবর নেন। এমন মানবিক মানুষ আমি কোথাও দেখিনি। স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতার ভাষা নেই। স্যারের কাছে আজ আবারও এসেছি। তিনি আমার জন্য স্থায়ীভাবে (ছাত্রজীবন) আর্থিক সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় এক বছর হলো রাজশাহীর ডিসি হিসেবে যোগদান করেছেন শামীম আহমেদ। যোগদানের পর থেকেই তিনি জেলার অসহায় মানুষদের জন্য সহযোগিতার হাত সবসময় করেছেন প্রসারিত। কোনো অসহায় মানুষ তার কাছে এসে ফিরে গেছেন—এমন কোনো নজির নেই বলেও ডিসি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন। এমনকি দেশের চলমান পরিস্থিতিতেও তিনি শত শত অসহায় শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ব্যস্ততার মাঝেও নিয়মিত রাখছেন তাদের খোঁজখবর।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘মানবিক কাজকর্ম করা আমার দায়িত্ব। জেলার অসহায়-গরিব মানুষ কোনো সমস্যা কিংবা আর্থিক সহায়তার জন্য এলে আমি কাউকে ফিরিয়ে দিই না। সাধ্যমতো চেষ্টা করি। আর জেলায় অনেক মেধাবী-অসহায় শিক্ষার্থী রয়েছে; যাদের টাকার জন্য পড়ালেখা থমকে যাওয়ার উপক্রম। আমি সাধ্যমতো এসব মেধাবী শিক্ষার্থীর পাশে ছিলাম এবং আছি।

এমন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে যারা পড়ালেখা শেষ করেই দেশের জন্য কিছু করতে পারবে, পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য ছিল না। এমন অনেককে সহযোগিতা করছি যাতে তারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে পারে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাকসু নির্বাচন / জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় শিবির, মরিয়া অন্যরাও

সালমান শাহর মৃত্যুর মামলার শুনানি শেষ, রায় চলতি মাসে

১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান দিচ্ছে সরকার, আশ্রয়ে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা : প্রধান উপদেষ্টা

নাগরিক দুর্ভোগ নিরসনে সিটি করপোরেশনে স্মারকলিপি দেবে বিএনপি

‘৩১ দফা শুধু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়, আমাদের বাঁচার স্বপ্ন’

রামুতে মিথ্যা মামলায় যুবক কারাগারে

মাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি সদস্যকে পাঠানো হলো ঢাকায়

মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত জকসু নীতিমালা, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষা

জাবিতে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে ১৬ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

বঙ্গ ফ্লেভার অ্যান্ড ফ্র্যাগরেন্স পরিদর্শনে জাইকা প্রতিনিধিদল

১০

চাকসুতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য থাকছে আলাদা বুথ

১১

বিশ্ববাজারে আবারও স্বর্ণের রেকর্ড দাম

১২

আরও ছয় পুলিশ পেলেন বিপিএম ও পিপিএম পদক

১৩

ইসরায়েলি পার্লামেন্টে ট্রাম্পের ভাষণে হট্টগোল, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির দাবি

১৪

ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু

১৫

গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, আসামিরা পলাতক

১৬

সংকটে মালদ্বীপ প্রবাসীরা, দেশত্যাগের মুখে ২৭ হাজার শ্রমিক

১৭

সৌদি থেকে ফেরত আনা হলো ৩৮ কোটি টাকা

১৮

আলু যেন গলার কাঁটা

১৯

এবার ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়ে ইসিতে আরেক দলের আবেদন

২০
X