দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১০:১৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘মা আমিও আব্বুর সাথে কবরে ঘুমাব আমাকে নিয়ে যাও’

ছবি হাতে নিহত জহিরুল ইসলামের রাসেলের মা ও তিন বছরের মেয়ে জুমা। কালবেলা 
ছবি হাতে নিহত জহিরুল ইসলামের রাসেলের মা ও তিন বছরের মেয়ে জুমা। কালবেলা 

‘মা আব্বু কই গেছে, আব্বুকে ফোন করো, আমি আব্বুর সাথে কথা বলব। আব্বু কই মা, আব্বুকে এনে দাও।’ মা সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন ‘তোমার আব্বু কবরে ঘুমাচ্ছে।’ মেয়ে বলে, ‘মা আমাকে কবরে নিয়ে যাও, আমিও আব্বুর সাথে কবরে ঘুমাব।’ এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে বায়না ধরছিলেন ছোট্ট শিশু জুমা। সম্প্রতি দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নে জহিরুল ইসলাম রাসেলের বাসায় গেলে এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়।

এর আগে গত ৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় জহিরুল ইসলাম রাসেল (২৪)। পর দিন ৫ আগস্ট রাত ৯টার দিকে জানাজা শেষে তাকে নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জহিরুল ইসলাম রাসেল দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের মৃত শাহ আলম সরকারের একমাত্র ছেলে। সে ছৈয়দপুর কামিল মাদ্রাসা থেকে ফাযিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পাশাপাশি ঢাকায় একটি জুতার সোল্ডার কারখানায় কাজ করত।

নিহত রাসেলের স্ত্রী জান্নাত ফেরদৌসী কাঁদতে কাঁদতে কালবেলাকে বলেন, আমার মেয়ে বারবার তার বাবাকে খুঁজছে, বাবা কোথায় গেছে কখন আসবে প্রশ্ন করছে, বাবায় কবরে ঘুমাচ্ছে বললে সে কবরে গিয়ে বাবার সাথে ঘুমাতে চায়। আমি তাকে কী পরিচয়ে মানুষ করব। আমার স্বামী ফেসবুকে প্রতিদিন আন্দোলনে আসতেছি বলে বলে বিভিন্ন পোস্ট দিত, দেশ স্বাধীনের আন্দোলনে অংশ নিতে সকল ছাত্রদের বলত। তার দেওয়া পোস্টগুলো ফেসবুকে এখনো আছে। আমার স্বামীকে যারা হত্যা করে আমার ছোট্ট মেয়েটাকে এতিম করেছে, আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা মোর্শেদা বেগম কাঁদতে কাঁদতে কালবেলাকে বলেন, অল্প বয়সে আমার বউ মা বিধবা হইল। নাতিন তার বাপকে হারাইল, আমি আমার একমাত্র বুকের ধন হারাইলাম। অভাবের সংসারের ঘানি টানতে ছেলেকে ঢাকায় চাকরি করতে পাঠাইছিলাম, ফিরল লাশ হয়ে। ঢাকায় গণ্ডগোলা শোনার পর ফোনে বারবার বলছিলাম বাবারে তুমি ওইসব আন্দোলনে যাইও না, নিষেধ করছি তাও শুনে নাই, উল্টো আমারে কইত ‘মা দেশ স্বাধীন করতে নামছি, স্বাধীন করেই ঘরে ফিরব, মাঝপথে ফিরে কাপুরুষ’ আমি আন্দোলনে না গেলে আর কে যাবে, যদি মরে যাই শহীদ হবো, বেঁচে থাকলে দেখা হবে। এসব বলে বলে আমাকে বুঝাইত। যে দিন আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয় সেদিন সকালে আমার সাথে কথা হয়। আমি নিষেধ করছিলাম যাইতে, তবুও গেছে। দুপুরে আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হইছে শুনে আমি বেহুঁশ হইয়া যাই। পরের দিন বাড়িতে দেখি কফিনে আমার ছেলে লাশ হইয়া শুইয়া আছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী মো. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, রাসেল গুলিস্তানেই চাকরি করত। সেদিন আমিও গুলিস্তানে ছিলাম। রাসেল গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমাকে একজন ফোন করে জানায়, আমি তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে বলি, তারা রাসেলকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। রাসেলের ডান হাতে ও ডান পাশের বুকে নিচে দুটি গুলি লাগে, প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।

এ বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদ কালবেলাকে বলেন, ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ জহিরুল ইসলাম রাসেলের বাড়ি পরিদর্শনে গিয়েছি। বাড়িতে থাকার মতো একটি ঘরও নেই, প্রতিবেশীর একটি ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করত। জামায়াতের পক্ষ থেকে তার পরিবারের জন্য একটি ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও তার মায়ের নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে সংসারের খরচ বাবদ নগদ টাকা দেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: কোটা সংস্কার আন্দোলন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মাঝির জালে ধরা ৬ মন ওজনের শাপলা পাতা মাছ, ৭৫ হাজারে বিক্রি

বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রবাসীর সর্বস্ব লুট

কুকুর-বিড়াল কামড়ের রোগী বাড়লেও বন্ধ ভ্যাকসিন কার্যক্রম

বাস-ট্রাক্টরের ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ২

জামায়াত-বিজেপি-এলডিপির প্রধানসহ গানম্যান পাচ্ছেন ৫ ব্যক্তি

দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

রাজধানীতে স্বেচ্ছাসেবক দলের আনন্দ মিছিল

রাশেদ প্রধানের জন্য পঞ্চগড়ের দুটি আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রার্থনা

ধোলাইখাল ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে জোরালো পদক্ষেপের আশ্বাস ইশরাকের

১০

কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল আইইবি

১১

কৃষি জমি নিয়ে দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

১২

এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ, যুবশক্তির নেত্রী আটক

১৩

এনসিপি নেতাকে গুলি, দেশত্যাগ ঠেকাতে বিজিবির কড়া নজরদারি

১৪

মহিলা দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক হলেন নার্গিস

১৫

আপনার একটি ভোটে নির্ধারণ হবে আগামী পাঁচ বছরের ভাগ্য : সেলিমুজ্জামান

১৬

জার্নাল ও গঠনতন্ত্রের মোড়ক উন্মোচন / ‘নিকডু’ একটি আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিণত হবে, প্রত্যাশা চিকিৎসকদের

১৭

রাতে অভিযান চালিয়ে আ.লীগের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার

১৮

সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার বিক্ষোভ / সহিংসতা-নৃশংসতায় তীব্র ক্ষোভ, জড়িতদের শাস্তি দাবি

১৯

শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে আ.লীগ নেতার পদত্যাগ

২০
X