বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক, গাজীপুর
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৭ পিএম
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গাজীপুরে ‘ডাকাত’ আতঙ্কে গাড়ি রেখে চলে গেলেন পুলিশ কর্মকর্তা

রেখে যাওয়া গাড়ি
রেখে যাওয়া গাড়ি

গাজীপুরে ‘ডাকাত’ আতঙ্কে দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে জিপ গাড়ি ফেলে পালিয়ে গেছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। পরে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা গাড়িটি জব্দ ও গাড়িতে থাকা আট রাউন্ড গুলিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেন।

গাড়ি রেখে পালিয়ে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তার নাম মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটে কর্মরত বলে জানা গেছে।

আহতরা হলেন- গাজীপুর রয়েল নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্র মাজেদুর রহমান ওরফে রুদ্র (২৪), সীমান্ত (২২) ও মোটরসাইকেলের চালক মোজাম্মেল হক (৪৫)। তাদের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত শিক্ষার্থী মাজেদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, গতকাল রোববার রাত ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কয়েকজন শিক্ষার্থী ডাকাত প্রতিরোধে ও ট্রাফিকের দায়িত্ব হিসেবে অবস্থান করছিলেন।

এ সময় একটি জিপ গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে যাওয়ার সময় গতিরোধ করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় চালকের আসনে থাকা ওই ব্যক্তি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এক শিক্ষার্থীর পায়ের ওপর গাড়ির চাকা উঠিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান।

অন্য শিক্ষার্থীরা তখন এক মোটরসাইকেলচালককে অনুরোধ করে ওই জিপ গাড়ির পিছু নেন। জিপ গাড়িকে ধাওয়া করে গাজীপুরের তারগাছ এলাকায় সেটিকে ধরে ফেলেন তারা। তখন জিপ গাড়ির চালক মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আশপাশের লোকজন গাড়িটিকে আটক করে। পরে গাড়িতে তল্লাশি শুরু করলে চালকের আসনে থাকা ব্যক্তি কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে দৌড়ে পালিয়ে যান।

গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে কর্মরত সাইফুল ইসলাম নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা ময়মনসিংহ থেকে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কর্মস্থলে যাওয়ার সময় চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কয়েকজন যুবক তার গাড়ির গতি রোধ করেন। যুবকরা তার গাড়ি তল্লাশি করতে চাইলে তিনি গাড়ি থেকে নেমে দেখেন কয়েকজন যুবকের মধ্যে একজনের হাতে ধারালো অস্ত্র আছে।

এ সময় তিনি ধারণা করেন শিক্ষার্থীদের পরিচয় দিয়ে হয়তো ডাকাতি করছে তারা। পরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ভয় পেয়ে গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে যান। এ সময় তারা একটি মোটরসাইকেল নিয়ে তারগাছ এলাকায় আবার পুলিশের গাড়িটিকে আটকে দেন। এতে তিনি ভয় পেয়ে ব্যক্তিগত পিস্তল দিয়ে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে গাড়ি ফেলে রেখেই দৌড়ে পাশের এক বাড়িতে আশ্রয় নেন। ভোরে তিনি ফোন করে পুলিশকে ঘটনার বিস্তারিত জানান।

পুলিশের কমিশনার আরও বলেন, শুনেছি এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখছি। ঘটনার তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ডিএমপির এডিসি সাইফুল ইসলাম পিপিএম কালবেলাকে বলেন, আমার শ্বশুর মৃত্যুবরণ করায় আমি পরিবার নিয়ে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় গেছিলাম। গণপরিবহন না থাকায় আমি পারিবারিক গাড়ি নিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে গেছিলাম। পরবর্তীতে আমার পরিবারকে সুনামগঞ্জে রেখে কর্মস্থলে যোগদানের উদ্দেশ্যে ১১ আগস্ট রাত ১২টায় ঢাকার দিকে রওয়ানা করি। গাড়িতে আমি একাই ছিলাম এবং আমিই চালক ছিলাম।

তিনি বলেন, রাত আনুমানিক ৩.১৫ মিনিটের দিকে গাজীপুরের চৌরাস্তার কাছে তিনজনের একটি দল আমার পথরোধ করে। এসময় তারা আমার গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চায়। আমি তাদের কাগজ এবং লাইসেন্স দেখানোর পরে তারা আমাকে গাড়ি থেকে নামতে বলে, কারণ তারা গাড়ি চেক করতে চায়। তখন আমি জানাই জায়গাটা জনশূন্য, আর গাড়িতে অবৈধ কিছু নেই। তারপরেও তারা গাড়ি সাইড করতে বলে। এসময় আমি তাদের হাতে একটা বাঁশ, লাল রঙের টেপ প্যাঁচানো রড এবং আরেকজনের হাতে ধারালো কিছু একটা দেখতে পাই, যার থেকে আলো রিফ্লেক্ট হচ্ছিলো। আমি তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দীহান হয়ে গাড়ি সোজা টান দেই। এসময়ে সামনে থেকে মধ্যবয়সী একজন (এ তিন জনের বাইরে চতুর্থ ব্যক্তি) গাড়িতে রড বা লাঠি জাতীয় কিছু একটা ছুড়ে মারে। সেখান থেকে বের হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে জানতে পারি, রাত ১১টার পরে কোনো ছাত্র ট্রাফিকের কাজ করে না। এতে আমি তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হই।

১৫ মিনিট গাড়ি চালানোর পরে গাজীপুরের বড়বাড়ি এলাকায় যানবাহনের প্রেসার বেশি থাকায় গাড়ি ধীরে আগাচ্ছিল।এ সময় হঠাৎ করে দুটি বাইকে করে আগের ৪ জনসহ মোট ৬ জন আমার গাড়িকে আঘাত করছিল আর থামাতে বলছিল। এক পর্যায়ে তারা গাড়ির পেছনের গ্লাস রড দিয়ে আঘাত করে ভেঙে ফেলে। আমি তবুও গাড়ি না থামালে গাড়ির চাকার সামনে তারা ধারালো কিছু নিক্ষেপ করে। ফলে গাড়ির সামনের চাকা ফেটে গাড়ি বসে যায়। এসময় চলন্ত গাড়িটি ঘুরে গেলে দুর্বৃত্তদের একটি মোটরসাইকেল পাশে পড়ে যায়। তখন আরেক মোটরসাইকেলে থাকা বাকি ৩ জন আমার দিকে দেশি অস্ত্র নিয়ে আঘাত করতে এলে আমি আমার ব্যক্তিগত পিস্তল দিয়ে আত্মরক্ষার্থে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করি। তখন অল্প সময়ের জন্য দুর্বৃত্তরা সরে গেলে আমি কৌশলে অন্ধকারে মিলে গিয়ে বড়বাড়ি এলাকায় গলির ভেতরে একটি বাড়ির ছাদে আশ্রয় নেই। এসময় দেখতে পাই দুই বাইকে দেশি অস্ত্রসহ আরও ৬ জন ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছে। আমাকে না চেনায় তারা আমার দিকে আসেনি। আমি জিএমপির গাছা থানার ওসিকে জানালে তিনি স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে আমাকে উদ্ধার করে বোর্ডবাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আমি সেখান থেকে বিকল্প পথে সাভার হয়ে ডিএমপি হেডকোয়ার্টারে এসে কমিশনার স্যারকে অবহিত করি। এ বিষয়ে গাছা থানা জিডি করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

১০

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

১১

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

১২

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

১৩

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

১৪

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার : উপদেষ্টা আসিফ

১৫

পিয়াইন নদীতে অবাধে বালু লুট, হুমকিতে বসতবাড়ি 

১৬

সোনালী ও জনতা ব্যাংকের অফিসার পদের ফল প্রকাশ

১৭

নরসিংদীতে একজনকে কুপিয়ে হত্যা

১৮

হোয়াটসঅ্যাপে নতুন কৌশলে অর্থ চুরি, যেভাবে নিরাপদ থাকবেন

১৯

টিটিইসহ ৫ জন আসামি / তিন মাসেও শেষ হয়নি ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার তদন্ত

২০
X