টানা ৮ দিন কুমিল্লাকে ভাসিয়ে অবশেষে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে গোমতী নদীর পানি। এ ছাড়া জেলার দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি উপজেলায় সামান্য পরিমাণে কমেছে বানের পানি। তবে মানুষের দুর্ভোগ ও ত্রাণের জন্য হাহাকার বেড়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শিশু খাদ্যের সংকট।
বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বর্তমানে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে গোমতীর পানি। মঙ্গলবার বিকেলে যা ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
এদিকে, গোমতীর পানি কমলেও গত ২২ আগস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় যেই স্থান দিয়ে গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙেছিল, সেই স্থান দিয়ে এখনো প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বুড়িচং ও পাশের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
গত তিনদিন আগে নতুন করে পুরোপুরি প্লাবিত হওয়া ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। এ ছাড়া বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্লাবিত হওয়ার পর পাশের দেবিদ্বার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা এরই মধ্যে ডুবতে শুরু করেছে গোমতীর পানিতে। আর সালদা ও ঘুংঘুর নদীর ভাঙনে এই তিন উপজেলায় প্রতিনিয়ত পানি বাড়চ্ছে।
জেলার প্রতিটি বন্যাদুর্গত এলাকাতেই আগের মতো নৌযানের রয়েছে তীব্র সংকট। যার কারণে ত্রাণসামগ্রী সমবণ্টন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বানভাসিরা। পাশাপাশি শিশু খাদ্য সংকটও চরম আকারে পৌঁছেছে।
বানভাসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোমতীর পানি কমলেও জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাতেই এখনো ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে আকস্মিক এই বন্যা। ত্রাণের জন্য চারদিকে মানুষের হাহাকার। প্রতিটি উপজেলায় ত্রাণের গাড়ি দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন দুর্ভোগে থাকা বানভাসিরা। বিশেষ করে বানের পানিতে এখনো পুরোপুরি তলিয়ে থাকা জেলার মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ১৪ উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা সাড়ে ১০ লাখের বেশি। তবে স্থানীয়দের, এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান বলেন, গোমতীর পানি বর্তমানে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও ওইদিন রাত থেকেই পানি নিচে নামতে শুরু করে। গত ২১ আগস্ট থেকে টানা ৮দিন পানি বিপৎসীমার ওপরে ছিল। ২২ আগস্ট সর্বোচ্চ বিপৎসীমা ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বিপৎসীমার নিচে পানি নামলেও যেই স্থান দিয়ে বাঁধ ভেঙেছে সেটি এখনই মেরামত করা যাচ্ছে না। কারণ ওই স্থানে তীব্র স্রোতের সঙ্গে এখনো লোকালয়ে পানি ঢুকছে। তাই পানি কমে লোকালয়ের নিচে না আসা পর্যন্ত বাঁধ মেরামত করা সম্ভব না। ধারণা করছি সেখানের বাঁধ মেরামতের উপযোগী হতে আরও অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে।
মন্তব্য করুন