রংপুরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে আলুর বাজার। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ১০ থেকে ১২ টাকায় বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ ক্রেতাদের। নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং কোল্ড স্টোরেজে তদারকি বাড়ানোর দাবি তুলেছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে।
শনিবার (৩১ আগস্ট) সরেজমিনে ঘুরে রংপুর সিটি বাজার, কামাল কাচনা বাজার, ধাপ বাজার, মাহিগঞ্জ বাজার ও লালবাগ বাজারে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে- রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম গাইবান্ধা ও নীলফামারীসহ এ অঞ্চলে এ অর্থ বছরে ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩৫৪ টন। যা গত বছরের তুলায় ৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে বেশি আলু চাষ হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, রংপুরে ৩৮টি কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। এসব স্টোরেজে ধারণক্ষমতা রয়েছে ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৭ টন। সেই অনুযায়ী এখনো বেশির ভাগ আলুই রয়েছে স্টোরেজে।
পাইকারি বিক্রেতারা জানান, এই সময়টাতে গৃহস্থ বা আলু উৎপাদনকারীদের ঘরে আলু থাকে না। যা আছে স্টোরে আছে। গত বছর ২৫০ টাকা বস্তা প্রতি ভাড়া থাকলেও কোনো কারণ ছাড়াই এ বছর নেওয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা। এই কারণে কোনোভাবেই বাজারে আলুর দাম কমছে না।
মূলত বিদ্যুতের দাম বেশির অজুহাতে আলুর সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে, যা অযৌক্তিক বলছে খোদ পাইকারি আলু বিক্রেতারা। বলছেন, কোনো কারণই এক বস্তা আলুর ভাড়া ৩৮০ টাকা হতে পারে না।
রংপুর সিটি বাজারের পাইকারি আলু বিক্রেতা মাহফুজ আলম বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ আলু রয়েছে স্টোরগুলোতে। তারা দাম ছাড়ছে না। স্টোরেই প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ছে ৪৬ টাকা। সেই আলু রিকশায় আনা-নেওয়া খরচসহ ১টাকা বেশি দরে বিক্রি করলেও ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্ত খুচরা পর্যায়ে ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, আপনারই বলুন তো ৫০ কেজি আলুর বস্তা ভাড়া কেমন করে ৩৮০ টাকা হয়।
রংপুর সিটির আলুর পাইকারি বাজারে কথা হয়, মমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজন হয় আলুর। কিন্তু এটার দাম কেন এত হবে। এই আলুই তো রংপুরে উৎপাদন হয়। আমরা চাই আলুর দাম কমুক।
একই বাজারে কথা হয় রাশেদুল মওলা রণির সঙ্গে। তিনি বলেন, কোল্ড স্টোরেজের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এই সিন্ডিকেট না ভাঙলে কোনোভাবেই দাম কমবে না। আমাদের প্রত্যাশা, আলুর দামটা অন্তত কমুক। এভাবে আর চলে না।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, এ বছর কৃষকের কাছ থেকেই বেশি দামে আলু বাজারে এসেছে। হিমাগারে রাখা আলুর দামও বেশি পড়ছে। বিদ্যুতের দাম বেশি, পরিবহন মজুরিসহ অন্যান্য খরচ বেড়েছে। গত বছর আলুর যে সংকট হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য বাড়তি যে উৎপাদন দরকার ছিল সেটা হয়নি।
মন্তব্য করুন