দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি বাণিজ্য কমে গেছে। চলতি অর্থবছরে জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে প্রায় ৬৮১ মেট্রিক টন পণ্য কম রপ্তানি হয়েছে। পণ্য অর্ডার করতেও ভয় পাচ্ছেন ত্রিপুরার ব্যবসায়ীরা।
আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে ওপারের ব্যবসায়ীরা সময়মতো পণ্য রপ্তানির নিশ্চয়তা চাচ্ছে। এপারের ব্যবসায়ীরা তাদের আস্বস্ত করলেও পণ্য রপ্তানির গতি বাড়ছে না।
আখাউড়া স্থল ও শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ভারতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আখাউড়া স্থলবন্দর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই মাসে ৩২০৯.৩৪ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি করে ২৪ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮৪ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। আর আগস্ট মাসে ২৫২৮.২৬ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি করে ১৮ কোটি ৮৩ লাখ ৮৮ হাজার ২৯৮ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এতে জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে ৬৮১.০৮ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি কম হয়েছে। তার বিপরীতে ৬ কোটি ১৩ লাখ ১১ হাজার ৮৬ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন কম হয়।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের পূর্বাঞ্চলের একমাত্র রপ্তানিমুখী বন্দর আখাউড়া স্থলবন্দর। এ বন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচলে বরফায়িত মাছ, শুঁটকি, বর্জ্য তুলা, সিমেন্ট, পাথর, মেলামাইন সামগ্রী, পিভিসি পাইপ, পিভিসি ডোর, আটা, জুস, ফার্নিচারসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক পণ্যবাহী গাড়ির পণ্য ওপারে রপ্তানি হয়ে থাকে।
তারা জানান, তবে গত আগস্ট থেকে এ বন্দর দিয়ে ভারতে অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমে গেলেও মাছের চাহিদা আগের মতোই রয়েছে। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মেট্রিক টন বরফায়িত মাছ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। যা থেকে প্রতিদিন ৭৩ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে এ দেশ।
মাছ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া জানান, দেশের একমাত্র রপ্তানিমুখী আখাউড়া স্থলবন্দরটির এখন জৌলুস হারিয়েছে। বিভিন্ন কারণে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি করছে ভারতে। এখন শুধু মাছ রপ্তানি করে বন্দরটি টিকে আছে। অন্যান্য পণ্য অল্প-স্বল্প রপ্তানি হয়ে থাকে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী রাজীব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, গত আগস্টে আখাউড়ায় আকস্মিক বন্যা ও দেশের অস্থিতিশীলতার কারণে এ বন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় পণ্য রপ্তানি কম হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী মাস থেকে পণ্য বাড়তে পারে। বর্তমানে এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১০ গাড়ির পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।
স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক নাসির উদ্দিন জানান, দেশের অস্থিতিশীলতা পরিবেশ ও বন্যার কারণে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি কমে গেছে। এখন থেকে আবার ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। সামনে ব্যবসার মৌসুম আসছে। আশা করা যায়, ব্যবসার গতি আগের জায়গায় ফিরে যাবে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসিবুল হাসান কালবেলাকে জানান, আগের তুলনায় এখন ভারতের ত্রিপুরায় পণ্য রপ্তানি কম হচ্ছে। ডলারের রেটের তারতম্য, দেশের রাস্তাঘাট ও দেশের অস্থিরতা এবং ত্রিপুরার চাহিদা কম থাকায় এ বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি কমে যাচ্ছে। তাছাড়া ত্রিপুরার সঙ্গে আন্তঃরাজ্যগুলোর সংযোগ সহজ হওয়ায় আমাদের দেশের পণ্য রপ্তানি কমে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সাদরুল হাসান চৌধুরী কালবেলাকে জানান, এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৬১টি পণ্য আমদানি করার অনুমতি থাকলেও আমদানির কোটা এখানে শূন্য। সব বৈধ পণ্য ভারতে রপ্তানি করার অনুমতি রয়েছে এ বন্দর দিয়ে। গত আগস্টে রপ্তানি কিছুটা কম হয়েছে।
মন্তব্য করুন