পাট বর্ষকালীন ফসল। বাংলাদেশে পাটকে সোনালি আঁশ বলা হয়। সেই সোনালি আঁশ পাট নিয়েই বিপাকে পড়েছেন জামালপুরের বকশীগঞ্জের কৃষকরা।
পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না তারা। এতে ক্ষেতেই শুকিয়ে মরে যাচ্ছে পাট। বর্ষা মৌসুমেও এই অঞ্চলে বৃষ্টির দেখা নেই। প্রচণ্ড তাপদাহের পাশাপাশি বৃষ্টি না থাকায় অধিকাংশ খাল, বিল, ডোবা ও জলাশয়ে পানি নেই। পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় হতাশ চাষিরা।
আরও পড়ুন : ভরা বর্ষায়ও বৃষ্টি নেই, আমন-পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা
জানা যায়, বকশীগঞ্জ উপজেলায় পাটের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। ২২ শত ৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন কৃষকরা। পাট কাটার উপযোগী হলেও পানির অভাবে বেশির ভাগ জমির পাট কাটছেন না কৃষকরা।
উপজেলার সদর ইউনিয়ন, নিলাক্ষিয়া, মেরুরচর, বগারচর, সাধুরপাড়া, বাট্টাজোড় ও কামালপুর ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে, কাটার উপযোগী অনেক পাট এখনো জমিতেই দাঁড়িয়ে আছে। পানির অভাবে পাট কাটছেন না কৃষকরা। অনেকেই আবার পাট কেটে জমিতেই ফেলে রেখেছেন বৃষ্টির আশায়। এ ছাড়া বন্যার পানির আশায় পাট না কেটে খেতেই রেখে দিচ্ছেন অনেক কৃষক। আবার যারা কিছু পাট কেটেছেন তাদের অনেকেই অটো ভ্যান, ইঞ্জিনচালিত ভটভটি ও মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে অন্যত্র খাল বিল কিংবা নিজস্ব পুকুরে অল্প পানিতে জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে নিচু জায়গায় জমে থাকা পানিতে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে করে ফলন ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাটের আঁশ ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। পাটের বাজারমূল্য অনেক কম হবে বলে আশঙ্কা কৃষকের। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
এ ব্যাপারে মেরুরচর গ্রামের কৃষক নওশেদ আলী বলেন, এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে, কিন্তু পানি না থাকায় তা কাটতে পারছি না। বৃষ্টি না থাকায় রোদে পুড়ে ক্ষেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে পাট। এতে অনেক লোকসান হবে।
আরও পড়ুন : সোনালি আঁশ সংগ্রহে ব্যস্ত খানসামার পাট চাষিরা
জাগিরপাড়া গ্রামের কৃষক আজাহার আলী বলেন, ৬ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন তিনি। এ বছর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে খাল-বিল-পুকুরে কোথাও পানি নেই। পানির অভাবে পাট কাটতে পারছেন না। পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বৃষ্টি ও বন্যার পানি না পেলে পাট ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাবে।
বাট্টাজোড় এলাকার কৃষক মজনু মিয়া বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ অনেক কম। বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই। এই সময় খাল-বিল-নদী-নালা পানিতে টইটম্বুর থাকে। এবছর কোথাও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই। বর্ষার পানির আশায় আছি। খালে সামান্য বৃষ্টির পানি জমছে। উপায় না পেয়ে সেখানেই পাট জাগ দিতে হচ্ছে। পানির অভাবে পাটের আঁশ ছাড়ানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
এ ব্যাপারে মেরুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গত বছর পাটের দাম বেশি পাওয়ায় চলতি বছর পাটের আবাদ বেশি করেছেন কৃষকরা। পাটের এবার বাম্পার ফলনও হয়েছে। তবে পানি না থাকায় পাট কাটা ও জাগ দেয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা।
এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মুসলিমা খানম নীলু বলেন, উপজেলায় এ বছর ২২ শত ৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। অন্য বছরের তোলনায় এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় খালে-বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। তাই কৃষকরা পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। তবে আমরা তাদের রিবনরেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছি।
মন্তব্য করুন