বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লিফট কেলেঙ্কারি ফাঁস করেছেন সংশ্লিষ্টরা। দরপত্র কার্যক্রমের প্রায় চার বছর শেষ হলেও এখনো বসানো হয়নি একটি আধুনিক লিফট। অভিযোগ উঠেছে, শুধু দরজা লাগিয়েই লিফট স্থাপন কাজের বিল তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
নতুন করে ওই লিফটি আর স্থাপন হবে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন এখন সংশ্লিষ্টদের। তার ওপর লিফটের পরিবর্তে দরজা লাগিয়ে রাখার কারণে দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে পাশের আরেকটি লিফট। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আরও পড়ুন : প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে হাসপাতাল আছে, ওষুধ নাই!
যদিও গণপূর্ত বিভাগ বলছে, ‘বৈশ্বিক করোনা মহামারিসহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে লিফট স্থাপন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির জামানত আটকে রাখা হয়েছে। সচল লিফট বুঝে না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হবে বলে জানিয়েছেন গণপূর্ত মেডিকেল ই-এম উপবিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ আলম।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও পুরাতন ভবনে আলাদাভাবে ৬টি লিফট স্থাপনে দরপত্র আহ্বান করে গণপূর্ত বিভাগ। লিফট সরবরাহ এবং স্থাপনের কাজ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। তারা ২০২০ সালে লিফট স্থাপনের কাজ শুরু করে। এর মধ্যে ৫টি লিফট স্থাপন হলেও বাকি একটি লিফট আদৌ চালু হয়নি। ৬টি লিফটের মধ্যে ২টি আধুনিক লিফট স্থাপনের কথা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দরপত্র অনুযায়ী, ওই লিফট সরবরাহ ও স্থাপন মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১ কোটি ৯৪ কোটি টাকা। এ কাজের সিকিউরিটি পারফরমেন্স হিসেবে জামানত রাখা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা।
ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড হাসপাতালের মাঝের ই-ব্লকের ৫ নম্বর লিফটি স্থাপন করেনি। লিফটির পরিবর্তে সেখানে শুধু গেট লাগিয়ে দিয়েই সব বিল তুলে নিয়েছে। ভেতরে কোনো প্রকার মেশিনারি নেই। ওই লিফটের কেবিনের নিচের অংশ আটকে রাখার কারণে পাশে থাকা ৬ নম্বর লিফটি গত দুই বছরের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে রোগী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
কারণ উল্লেখ করে লিফট পরিচালনা এবং তদারকির দায়িত্বে থাকা একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হাসপাতালের নতুন এবং পুরোনো ভবন মিলিয়ে মোট ১৬টি লিফট রয়েছে। যার মধ্যে পুরোনো ভবনে লিফট ১০টি। এর মধ্যে সচল মাত্র ৬টি। বাকিগুলো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায়ই বন্ধ থাকে। যেগুলো সচল তাও অফিস সময় ব্যতীত চলে ২-৩টি লিফট।
গত চার বছরেও লিফট স্থাপন না করার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে বরিশালে তাদের লিফট তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা লিফট স্থাপন না করার কথা স্বীকার করলেও নিজেদের নাম পরিচয় জানাতে রাজি হননি।
তবে লিফট স্থাপন না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বরিশাল গণপূর্ত মেডিকেল ই-এম উপবিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ আলম বলেন, ‘মাঝে করোনার কারণে দীর্ঘ সময় কাজ বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে পুরোনো ভবনে দুটি লিফটই লাগানো হয়েছে। তবে একটি লিফটের ছোট একটি যন্ত্র না থাকায় সেটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘যেই যন্ত্রটির প্রয়োজন, সেটা বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। এটি সুইজারল্যান্ড থেকে আমদানি করতে হয়। কোম্পানির সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা ওই যন্ত্রটি সরবরাহের চেষ্টা করছে বলে আমাদের জানিয়েছে।’
লিফট স্থাপন কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিল তুলে নেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে প্রকৌশলী ফিরোজ আলম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির কাজের জামানত (সিকিউরিটি পারফরমেন্স) বাবদ ৫০ লাখ টাকা জমা রয়েছে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ না করে জামানত ফিরে পাবে না।’ তবে খুব শিগগিরই ওই লিফটি চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, ‘শেবাচিম হাসপাতালে লিফট স্থাপন না করে বিল তুলে নেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য জানতে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কয়েকবার তার সরকারি কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি মুঠোফোনের সরকারি নম্বরে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন