ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘আগে সংস্কার হবে, এরপরে নির্বাচন’

ফরিদপুরে ছাত্র সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ছবি : কালবেলা
ফরিদপুরে ছাত্র সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ছবি : কালবেলা

ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, আগে বিচার হবে, সংস্কার হবে, এরপরে নির্বাচন। তার আগে কোনোভাবেই নির্বাচন দেওয়া যাবে না। অবিলম্বে ‘প্রোক্লেমেশন অফ জুলাই রেভ্যুলিউশন’ ঘোষণা সরকারকে দিতেই হবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, ঠিক সেভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করতে হবে।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকাল ৪টায় শহরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, গত দেড় দশক ধরে খুনি হাসিনা আমাদের দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। আমাদের দেশটা নেতৃত্ব শূন্যতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমাদের পূর্বতন যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব রয়েছে বিভাজনের কারণে তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি, তারা ব্যর্থ হয়েছে। তারা যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, ঠিক সে জায়গাতেই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে হাল ধরতে হয়েছে।

তিনি বলেন, আগস্টের ৬ তারিখের পর আজ পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান বিচার আমরা দেখতে পাইনি। ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। ২০১৪ সালের শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে যেভাবে নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছে সেগুলোর এখন পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যদি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের কাজকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়, তাহলে অবশ্যই এ বিচারগুলোকে সম্পন্ন করতে হবে।

তিনি বলেন, এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা দেখি- নানা বিদ্রোহ করা হয়, সচিবালয়ে আগুন লাগানো হয়। আপনাদের বলি- আপনারা রিয়েলিটি মাইনা নেন। ছাত্রসমাজ যতদিন জেগে আছে, ততদিন এই খুনি শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারবে না। ঢাকার মসনদে কে বসবে সেটি আগে দিল্লি থেকে নির্ধারণ করা হতো। এখন আর দিল্লি নয়, এ দেশের জনগণই নির্ধারণ করবে ঢাকার মসনদে কে বসবে।

সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, যারা ক্ষমতার লোভে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষের রক্ত ও জীবনকে বিন্দুমাত্র মূল্য দেয় না, তাদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না বাংলাদেশের মানুষ। এই দেশের মানুষের জীবনের দিকে আর যদি কোনো শকুন দৃষ্টি দেয়, তাহলে তার চোখ উপড়ে ফেলবো। হোক সে দেশের ভেতরের শক্তি অথবা বাইরের শক্তি। আমরা আমাদের শহীদ ভাইদের হত্যার বিচার চাই।

তিনি বলেন, ওই শেখ হাসিনা দেশে আসবে, তবে সে দেশে এসে সরাসরি ওই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে। এসে সরাসরি ওই কাঠগড়া থেকে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের অবশ্যই একটি যৌক্তিক সময় নির্বাচন হবে। তবে তার পূর্বে এই খুনি হাসিনা আমাদের দেশের যে সিস্টেমগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে, সে সিস্টেমগুলোকে সংস্কার করতে হবে। আমাদের এই বাংলাদেশ আর কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা চোখে চোখ রেখে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করব। পৃথিবীর কোনো বহিঃশক্তি যদি আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের চেষ্টা করে তাহলে আমরা সেই পররাষ্ট্রনীতি ছুঁড়ে ফেলবো।

তিনি বলেন, আমরা একটি জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দিয়েছি। সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকতে হবে। এই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে। সেই ঘোষণাপত্রে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের কথা স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে।

কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় ছাত্র সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন সোহেল রানা। অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- হাসিব-আল ইসলাম, রিফাত রশীদ, আশরেফা, রাজেন্দ্র কলেজ শাখার প্রধান কাজী রিয়াজ, ফারহান আহসান অর্ণব, নাবিলা তালুকদার, তাহসিন হাসান দ্বীন, মাহমুদুল হাসান ওয়ালিদ, সানজিদা রহমান সমতা, জেবা তাহসিন, শাহ মো. আরাফাত প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় ফরিদপুরে বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এসব সশস্ত্র হামলার সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখনো অনেকে আমাদের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আন্দোলনে আহত অনেকে পারিবারিক কারণে থানায় মামলা করতে পারেনি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আন্দোলনে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার। তারা বলেন, এই দেশে আর মুজিববাদ ফিরে আসবে না।

সমাবেশ শুরুর পর মঞ্চ থেকে নেমে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছাত্র আন্দোলনে ফরিদপুরের ৮ শহীদ ও আহতদের এসে খোঁজখবর নেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সাজিদ আলমসহ অন্য কেন্দ্র নেতারা।

ছাত্রসমাবেশ উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকরা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যানার ও প্লাকার্ড নিয়ে মিছিলসহ সমাবেশস্থলে যোগ দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

থানা ব্যারাকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণ, তিনজন ক্লোজড

পিআর পদ্ধতিতে সব ভোটারের মূল্যায়ন হয় : চরমোনাই পীর

তিস্তায় কার্টুন বক্সে ভাসছিল নবজাতকের মরদেহ

দেশের উন্নয়নে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে : চসিক মেয়র

কৃষক দল সম্পাদক বাবুলের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল

চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সতর্কবার্তা / ‘সাংবাদিকরা চুপ থাকলে সমাজ অন্ধকারে ডুবে যাবে’

১০

যেসব অনিয়মে বাতিল হবে এজেন্সির নিবন্ধন

১১

অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে সিলেট জেলা পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ : পুলিশ সুপার

১২

বগুড়ায় সাহিত্য উৎসব শুক্রবার, অংশ নিবে দুই শতাধিক কবি

১৩

বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি রোধে নতুন নির্দেশনা

১৪

জুলাই শহীদদের স্মরণে জবিতে গ্রিন ভয়েসের বৃক্ষরোপণ ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন

১৫

মার্কিন বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানে রুশ হামলা

১৬

মালয়েশিয়ার পর চীন সফরে যাবেন নাহিদ

১৭

৩১ দফাই হচ্ছে আমাদের জাতীয় সনদ : সুব্রত চৌধুরী

১৮

টিসিবির নিয়ন্ত্রণ হারানো ট্রাকচাপায় বৃদ্ধ নিহত

১৯

ইতালির প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর বাতিল

২০
X