আমিরুল ইসলাম, কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৩, ০২:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা

‘বীর নিবাসে উঠপার পারমু কিনা জানি না’

নির্মাণাধীন বীর নিবাসের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী। ছবি : কালবেলা
নির্মাণাধীন বীর নিবাসের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী। ছবি : কালবেলা

মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ কারী অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার বীর নিবাস নির্মাণকাজের বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সরকারি তালিকা অনুযায়ী কামারখন্দ উপজেলায় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও প্রয়াত যুদ্ধ বীরদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বীর নিবাস প্রকল্পের তালিকায় উপজেলার প্রথম ধাপে ১১টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ২২টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের নাম ওঠে। ২০২১ সালে প্রথম দফায় ১১ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও ২০২২ সালে দ্বিতীয় দফায় ২২ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য সরকারিভাবে পাকা ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রতিটি ১তলা বিশিষ্ট বীর নিবাসে ২টি শয়নকক্ষ, ১টি বসার কক্ষ, ১টি খাওয়ার কক্ষ, ১টি রান্নাঘর, ১টি প্রশস্ত বারান্দা ও দুটি শৌচাগার থাকছে। প্রতিটি বাড়ির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ টাকা।

সরেজমিনে উপজেলার জামতৈল, হায়দারপুর, কাজিপুরা, বাঁশবাড়িয়া এলাকায় দেখা গেছে, গত দুই বছর ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রথম ধাপের আবাসন প্রকল্পের বীর নিবাস তৈরি হচ্ছে ধীর গতিতে কোনোটিতে বীর পরিবার ওঠার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এমনকি অনেক বীর নিবাসে ছাদ আর ইটের গাঁথুনি ছাড়া আর কিছু দেখতে পাওয়া যায়নি। এখনও দেয়ালে প্লাস্টার, জানালার গ্রিল, থাই, মেঝেতে টাইলস, টয়লেটের প্যান, কমোড, বারান্দার শেড, বিদ্যুতের কাজ এগুলো কিছুই হয়নি। এ অবস্থায় পড়ে আছে নির্মাণকাজ। কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।

হায়দারপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী কালবেলাকে বলেন, দুই বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের ঠিকাদার। ঠিকাদার বলে ইট, বালু, রডের দাম বেড়েছে এই প্রকল্পটি তৈরি করতে ওই সময় যে বাজেট ধরা হয়েছিল। তা দিয়ে এই সময় কাজ করা মুশকিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজ না করে এখন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় কারণ দেখাচ্ছে ঠিকাদার। দীর্ঘদিন ধরে কাজ চলমান থাকায় পূর্ণ ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা।

কাজিপুরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী ফেরদৌসী আরা কালবেলাকে বলেন, প্রথমে সাংবাদিক দেখে কোনো কিছু লিখে কাজ হয় না, দুই বছরেও এই বাড়ি তৈরি হয় না বলে আফসোস করেন। আমার স্বামী মারা গেছেন। একটা ছেলে সেও চাকরির সুবাদে দূরে থাকেন। বেশি কথা বললে কাজ বন্ধ রাখার কথা বলে ঠিকাদার। আমি এ ব্যাপারে ইউএনও অফিসে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। কাজ শুরুর প্রথমে যখন নিম্নমানের জিনিস দিয়ে কাজ করে তখনও পিআইও অফিসে জানিয়েছিলাম। তারা ভিজিটে আসলে তখন ভালো মানের ইট ও ইটের খোয়া দিয়ে কাজ শুরু করে। কিছুদিন না যেতেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কাজ শুরু হলে আবারও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদার। দেখেন, দুই বছরে ছাদ আর ইটের গাঁথুনি ছাড়া আর কি হয়েছে। ঠিকাদার যেভাবে কাজ করছে মনে হচ্ছে আরও দুই বছরে লাগবে।

বাঁশবাড়িয়া গ্রামের অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী হাতেম আলী সেখ ও তার পুত্রবধূ সুফিয়া খাতুন কালবেলাকে বলেন, প্রথমে যে ঠিকাদার কাজ শুরু করেছিল তারা আর নেই। এখন অন্য নতুন ঠিকাদার এসে কাজ করে। কাজের মান ভালো না। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ নিয়ে আমরা মিস্ত্রীদের ফোন দিলে তারা বলে, ইট ও সিমেন্ট ঠিকাদার পাঠিয়ে আমাদের বললে আমরা কাজ করতে যাবো। আবার ঠিকাদারকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও রিসিভ করে না। তাদের সঙ্গে কথা বলা যায় না। ২ বছরে ছাদ আর ইটের দেয়াল গাঁথা ছাড়া আর কোনো কাজই হয়নি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী হাতেম আলী সেখ অসুস্থ অবস্থায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘একা একা চলাফেরা করতে পারি না। বীর নিবাসে উঠপার পারমু কিনা জানি না।’ এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনামুল এন্টারপ্রাইজের মোস্তাক আহমেদ কালবেলাকে বলেন, যে ঠিকাদার প্রথমে কাজ শুরু করেছিল সে কিছু কাজ করে ২৫ শতাংশ বিল তুলে পালিয়েছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে গত তিন মাস ধরে কাজ শুরু করেছি। আগামী ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শরিফুর জোয়ারদার কালবেলাকে বলেন, প্রথম ধাপের ১১টি বীর নিবাস নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ধাপের ৯৮ শতাংশ কাজ হয়েছে। আমরা বারংবার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দিচ্ছি। যাতে করে তারা দ্রুত কাজ শেষ করে। এখন পর্যন্ত প্রথম ধাপের জন্য ২৫ শতাংশ বিল উঠাতে পেরেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পের কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিন সুলতানা বলেন, আমি নতুন এসেছি। বীর নিবাসের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে দ্রুত কাজ শেষ করার ব্যবস্থা নেব। আশা করছি, দ্রুত এর সমাধান হয়ে যাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যে ছয় ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছাড়তে রাজি নয় ইসরায়েল

ময়মনসিংহে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

ধানের শীষের বিজয় মানেই জনগণের মুক্তি : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

বাবর আজমকে নিয়ে ধারাভাষ্যে রমিজ রাজার তির্যক মন্তব্য

‘সঠিক ও মানসম্পন্ন সংবাদ উপস্থাপনে সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে’

আন্দরকিল্লা মসজিদ আইকনিক করতে ব্যয় ৩০০ কোটি

মেসির চেয়েও ধনী শুধু দুইজন ক্রীড়াবিদ!

প্রবাসীর ছেলেকে দাদা-দাদির কবরের পাশে ঠাঁই দিল না চাচারা

শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

১০

বিপিএলের জন্য নতুন রূপে প্রস্তুত হচ্ছে রাজশাহী স্টেডিয়াম

১১

সাংবাদিককে আটক করে পুলিশের মারধর, গায়েব করার হুমকি

১২

রেড ক্রিসেন্ট থেকে এনসিপি নেতাকে অব্যাহতি

১৩

নাসিরের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আবারও এনসিএল শিরোপা রংপুরের ঘরে

১৪

কিশোরগঞ্জ থাকবে ঢাকাতেই, ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ

১৫

মক্কায় ১২৫ কিমি এলাকাজুড়ে স্বর্ণের খনির সন্ধান 

১৬

অগ্রযাত্রায় নবীন শিক্ষকদের অবদান রাখতে হবে : খুবি উপাচার্য

১৭

কক্সবাজার সৈকত থেকে অর্ধশতাধিক টংঘর উচ্ছেদ

১৮

১২ থেকে ১৫ ঘণ্টার মধ্যেই রাকসু নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ : ভিসি

১৯

কুলদীপের ঘূর্ণিতে ফলোঅন, তবু লড়াইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

২০
X