ইমাদ আহমেদ
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪, ০২:৩১ পিএম
আপডেট : ০৫ মে ২০২৪, ০৫:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে রেমিট্যান্স

১৪ মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশি বর্তমানে বিদেশে কাজ করছেন। ফাইল ছবি
১৪ মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশি বর্তমানে বিদেশে কাজ করছেন। ফাইল ছবি

বিদেশে কর্মরত লাখ লাখ বাংলাদেশি প্রতিনিয়ত দেশে তাদের পরিবার-পরিজনদের কাছে অর্থ পাঠাচ্ছে। বহু বছর ধরে দেশের অনেক পরিবারের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত হচ্ছে এই অর্থের মাধ্যমেই। ১৪ মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশি বর্তমানে বিদেশে কাজ করছেন, যাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ বছরে পাচ্ছে বিলিয়ন ডলার; যা আমাদের জিডিপির প্রায় ৬%।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ২২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারে বৈদেশিক রেমিট্যান্স থেকে আসা এই অর্থপ্রবাহ।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রেমিট্যান্স

অর্থনৈতিক উন্নয়ন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সম্প্রদায়গুলোর প্রকল্পের তহবিল, আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধি এবং ছোট ব্যবসায় উদ্যোগগুলোর সহায়ক হতে পারে রেমিট্যান্স। আর এটি সম্ভব হতে পারে কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে। যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার খাতের মতো বৃহত্তর স্থানীয় প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থ রেমিট্যান্স থেকে আসবে কাঠামোগতভাবে।

এই ধরনের মডেলগুলো কেবল এই তহবিলগুলোকে বৃদ্ধি করে না, বরং একইসাথে পরিবারগুলোর পাশাপাশি সম্পূর্ণ একটি কমিউনিটি বা সম্প্রদায়ের সুবিধা নিশ্চিত করে। এই লেনদেনগুলো আরও সুবিধাজনক করতে, ট্যাপট্যাপ সেন্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ভরযোগ্য এবং সহজ রেমিট্যান্স পরিষেবা প্রদান করছে।

আর্থিক সাক্ষরতা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন

আমাদের অনেকেরই আর্থিক পরিষেবা বা কোনো অর্থের তহবিল ব্যবহার করার বাস্তব সম্মত ধারণা নেই। ফলে রেমিট্যান্সের পরিষেবাগুলো বুঝতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য রেমিট্যান্স গ্রাহকদের মধ্যে আর্থিক সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। তাহলে রেমিট্যান্সের এই গ্রাহকরা বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রেও ভালোভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। এতে তাদের সার্বিক সঞ্চয় বৃদ্ধি পাবে এবং ভবিষ্যতে রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরতাও কমে যাবে। অভিবাসী শ্রমিকরাও তাদের দেশে আর্থিক পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে জানতে পারবে। এতে তারা রেমিট্যান্সের বৈধ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতেও উৎসাহিত হবে। অন্যদিকে, মানি ট্রান্সফারের পরিষেবায় খরচ এবং লোকসান কমবে।

রেমিট্যান্সের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন করার অন্যতম একটি উপায় হলো আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। রেমিট্যান্স প্রাপকদের একটি বড় অংশ, বিশেষত গ্রামাঞ্চলের মানুষজন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা পেতে পারে না। তাই তাদের কোনো আর্থিক নিরাপত্তাও থাকে না। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করার সুযোগও তাদের কম থাকে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) চালু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে যুগান্তকারী সমাধান দিয়েছে। বিকাশের মতো এমএফএস প্ল্যাটফর্মগুলো রেমিট্যান্স ট্রান্সফারকে দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য করে তুলেছে। এমন পরিষেবাগুলো আরও ছড়িয়ে দিতে পারলে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে রেমিট্যান্স প্রাপকরা আরও এগিয়ে যাবে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রেরণা

ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা (এসএমই) বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। আমাদের জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশ আসে এসএমই থেকে। এ ধরনের ব্যবসার মূলধনের জন্য রেমিট্যান্স হতে পারে একটি অন্যতম উৎস। দেশের ক্ষুদ্রঋণ উদ্যোক্তাদের ব্যবসা প্রসারের জন্য রেমিট্যান্স থেকে প্রাপ্ত অর্থ সহায়ক হতে পারে।

রেমিট্যান্সপ্রবাহ এবং জীবনযাত্রার মানের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোগ উঠে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ মাইগ্রেশন অ্যান্ড রেমিট্যান্স ইউনিটের (আর.এম.এম.আর.ইউ) একটি গবেষণায়। এতে দেখা যায়, রেমিট্যান্সের অর্থ দিয়ে যে পরিবারগুলো জীবনযাপন করছে, তাদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত। এ ছাড়া গ্রামের অনেক পরিবার তাদের কৃষিকাজ এবং অন্যান্য উপায়ে জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যেও রেমিট্যান্সের এই অর্থ খরচ করে। এভাবে, আর্থিক নিরাপত্তার পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি হয়ে উঠছে আরও গতিশীল।

নীতিমালা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা

রেমিট্যান্স গ্রাহকদের প্রাপ্য অর্থের বিশাল একটি অংশ চলে যায় রেমিট্যান্সের সঙ্গে যুক্ত লেনদেনে উচ্চমাত্রার খরচের কারণে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য বিশ্বব্যাপী গড় ব্যয় আনুমানিক ৬%। যার পরিমাণ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রায়ই ছাড়িয়ে যায়। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পার্টনারশিপের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এই খরচ কমাতে সহায়ক হবে।

উন্নয়নের জন্য রেমিট্যান্সকে কাজে লাগানোর জন্য সংশ্লিষ্ট নীতিমালা এবং এর কাঠামো শক্তিশালী হওয়া অপরিহার্য। বিনিয়োগ বা কমিউনিটিভিত্তিক প্রজেক্টের উদ্দেশ্যে দেশের সরকার রেমিট্যান্স খাতে নানা প্রণোদনা সৃষ্টি করতে পারে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে। কর প্রণোদনা, ম্যাচিং ফান্ড অথবা রিস্ক গ্যারান্টির তেমন কিছু উদাহরণ।

চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান

ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যবহারের পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজে রেমিট্যান্সের অর্থ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য দরকার রেমিট্যান্স খাতের সঠিক ব্যবহার। এর জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমন্বিত প্রচেষ্টা, উদ্ভাবনী আর্থিক পরিষেবা এবং সংশ্লিষ্টদের দৃঢ় প্রচেষ্টা।

রেমিট্যান্স পরিষেবার প্রতিষ্ঠান ট্যাপট্যাপ সেন্ড সম্প্রতি প্রবাসীদের জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর নাদির অন দ্য গো-এর সাথে যৌথভাবে কাজ করেছে। যেখানে দুবাইয়ে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের জীবন সম্পর্কে তথ্যের পাশাপাশি উঠে আসে কিভাবে তারা দেশের রেমিট্যান্স খাতে অবদান রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাত কেবল অর্থ আদান-প্রদানের মাধ্যমগুলোতেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু কৌশলগত পরিকল্পনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে এটি আবির্ভূত হতে পারে দেশের টেকসই উন্নয়নের অনুঘটক হিসেবে।

লেখক: প্রবাসীদের জন্য রেমিট্যান্স পাঠানোর অ্যাপ ‘ট্যাপট্যাপ সেন্ড’ এ কাজ করছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছাত্রলীগ কর্মীকে বেধড়ক কোপাল প্রতিপক্ষরা

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে আল্টিমেটাম

অবশেষে লালমনিরহাটে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি

মিষ্টি বিতরণের ধুম / চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত

উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত

টানা কয়েকদিন বৃষ্টির আভাস

পৃথিবীর যে স্থানে কেউ যেতে পারে না

সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় মামলা

সংগঠনের অবস্থা জানতে জেলা সফর শুরু করছে যুবদল

সৌদিতে প্রথমবার সাঁতারের পোশাকে নারী ফ্যাশন শো

১০

তিস্তা নদীতে গোসল করতে গিয়ে কিশোরের মৃত্যু

১১

সমুদ্রপাড়ে সিডিএ প্রকৌশলীদের ‘বারবিকিউ পার্টি’

১২

জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে চাচার হাতে ভাতিজি খুন

১৩

পশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

১৪

অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে সরকার : মান্না

১৫

অমরত্ব পেল লেভারকুসেন

১৬

শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য : পরশ

১৭

ইউরোপে ভয়ংকর মিশনে নেমেছে ন্যাটো-সিআইএ

১৮

‘চেয়ারে বসলেই ৫০ কোটি টাকা’

১৯

রাজশাহীতে পুলিশ-বিএনপি ধ্বস্তাধ্বস্তি

২০
X