সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সিলেটে বইয়ের জন্য শিশু শিক্ষার্থীদের হাহাকার

শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু সংখ্যক বই নেওয়া হচ্ছে। ছবি : কালবেলা
শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু সংখ্যক বই নেওয়া হচ্ছে। ছবি : কালবেলা

সিলেটে নতুন বইয়ের জন্য হাহাকার করছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা। এতে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও। বছরের প্রথম মাস শেষ হওয়ার পথে। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা প্রায় দেড় মাসের ছুটি। এখনো একটি বইও হাতে পায়নি প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।

বই না পাওয়ায় ক্লাসে তেমন একটা উপস্থিতিও নেই শিক্ষার্থীদের। এমনকি অনলাইন থেকে প্রিন্ট করে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে মিলছে না অনলাইন কপি। শহর এলাকায় অভিভাবকরা নিজ খরচে অনলাইন কপি প্রিন্ট করে তাদের সন্তানদের হাতে দিলেও বঞ্চিত হচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা।

গ্রামীণ এলাকার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে পুরোনো বই দিয়ে দু-একটা ক্লাস করানো হচ্ছে। তাও আবার এক বেঞ্চে একটি বই দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। পুরোনো বইয়ের সংকট থাকায় কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে দুই বেঞ্চের শিক্ষার্থীরা মিলে একটি মাত্র বই দেখার সুযোগ পাচ্ছে।

শহরের শিক্ষার্থীরা খুব একটা মাদ্রাসামুখী না হলেও বই না থাকায় স্কুল বিমুখ হচ্ছে তারা। তবে অনেকে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন কপি সংগ্রহ করে পড়াশুনা শুরু করেছে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে অভিভাবকদের। এতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প আয়ের অভিভাবকরা।

সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা রাজু আহমদ বলেন, বাচ্চারা পরীক্ষা দিয়ে আশায় থাকতো বছরের প্রথম দিন বই পাওয়া যাবে। কিন্তু এবার ছন্দপতনে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ করা যায় সে দিক নিয়ে ভাবতে হবে।

রাজা ম্যানশনের কম্পিউটার ও স্টেশনারি ব্যবসায়ী সেলিম আহমদ বলেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনেক অভিভাবক এসে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বইয়ের প্রথম অধ্যায় প্রিন্ট করেছেন। এখনো প্রতিদিন অনেকে এসে প্রিন্ট করছেন। যাদের আর্থিক সমস্যা রয়েছে তারা সাদাকালো প্রিন্ট করছেন।

এদিকে সিলেটের কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলাসহ কয়েকটি এলাকার প্রাথমিকের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে শুধু প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কোনো বই বিদ্যালয়ে পৌঁছায়নি। সময়মতো পাঠ্যবই সরবরাহ করতে না পারায় এসব ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারে নেই বললেই চলে। আর যেসব শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যায় তাদেরকে পুরোনো বই দিয়ে পাঠদান করা হয়। ক্লাস শেষে আবার বই অফিসে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব শিক্ষকরা বলেন, পুরোনো বইও না থাকায় এক বেঞ্চের শিক্ষার্থীদের একটি বই দিয়ে পাঠ করানো হয়। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে দুই বেঞ্চের শিক্ষার্থীরা মিলে একটি বই পাঠ করে।

কানাইঘাট উপজেলার চতুল ইউনিয়নের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কোনো বই বিদ্যালয়ে পৌঁছায়নি। পুরোনো বইও নেই। কয়েকটি বই থাকায় সেগুলো পাঠদানের সময় ক্লাসে নিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়। ক্লাস শেষে আবার নিয়ে নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে এক বেঞ্চের শিক্ষার্থীদের একটি বই দিয়ে ক্লাস করাতে হচ্ছে।

পাঠ্যবইয়ের অনলাইন কপি সরবরাহ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় অনলাইন কপি প্রিন্ট করে নিয়ে আসার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়া প্রতিষ্ঠান থেকে প্রিন্ট কপিও দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা অনলাইন কপি বোঝে না, তাদের কাছে বই জরুরি।

তিনি আরও বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে নতুন বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা বই পেয়ে আসছিল। এ বছর সেই ধারাবাহিকতা না থাকায় অনেকেই ধরে নিয়েছেন বই পাবেন না। এজন্য কিছু কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসে আসছে না।

বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, বই না থাকায় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা যাচ্ছে না। গড়ে ৪-৫ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে আসে। কিছু শিক্ষার্থী মাদরাসায় চলে যাওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে মাদরাসাগুলোর ব্যাপক প্রচারণা অন্যতম একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রমি দেব কালবেলাকে বলেন, তিনটা বই পেয়েছি। বাংলা, গণিত ও ইংরেজি। বাকি বইগুলো না পাওয়ায় পড়ালেখায় অনেকটা পিছিয়ে পড়ব ৷ সামনে বিদ্যালয়ের বার্ষিক খেলাধুলা, এরপর আবার রমজান মাসের বন্ধ ৷ বলা হচ্ছে, আস্তে আস্তে সব বই দেওয়া হবে। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

একই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইবা রহমান খান কোনো বই না পেয়ে অনেকটা কান্না জর্জরিত কণ্ঠে বলেন, সরকার তো পাল্টে গেছে, ড. ইউনূসের মনে হয় বই দিতে একটু দেরি হচ্ছে৷

সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের অন লাইন থেকে প্রিন্ট করে পড়ার জন্য বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে যে বই দেওয়া হয়েছে তা ভাগাভাগি করে পড়তে হবে। কবে বই আসবে-নির্দিষ্ট করে তাদের জানানো হয়নি বলে তিনি কালবেলাকে জানান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজায় হামাসের বন্দুকধারীদের টহল

আগামীর রাষ্ট্রকাঠামোর পূর্ণ রূপরেখা ৩১ দফাতেই রয়েছে : কফিল উদ্দিন 

পরিবেশ রক্ষায় ৮০ হাজার বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে : টুকু 

ক্ষমতায় এলে ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থান গড়বে বিএনপি : আমিনুল হক

মিসরে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেলেন ট্রাম্প

নেইমারের জন্য এখনও দরজা খোলা রেখেছেন আনচেলত্তি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ ও প্রফেশনাল কোর্সের সব পরীক্ষা স্থগিত

ইতিহাস গড়ে ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট পেল কেপ ভার্দে

পলিথিনে মোড়ানো শপিং ব্যাগে মিলল নবজাতকের মরদেহ

রোমে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক

১০

কলাবাগানে ডিপ ফ্রিজ থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার

১১

অবশেষে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে গাজা শান্তিচুক্তি সই

১২

জয়পুরহাট জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কের পদত্যাগ

১৩

শরীয়তপুরে নির্যাতিত শিশুর পাশে তারেক রহমান

১৪

‘ড. তোফায়েলের শূন্যতা বহু দশক অনুভূত হবে’

১৫

আওয়ামী লীগ নেত্রী কেকার মরদেহ উদ্ধার

১৬

স্থানীয় সমস্যা সমাধানের আশ্বাস আনোয়ারুজ্জামানের

১৭

পূজা পরিষদ ও মহানগর কমিটির প্রত্যাশা / সংকট সমাধানে এক হয়ে কাজ করার নজির অব্যাহত থাকুক

১৮

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে : পিএনপি

১৯

শেষ ওভারের নাটকীয়তায় প্রোটিয়াদের কাছে বাংলাদেশের হার

২০
X