তোফায়েল হোসেন জাকির, সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা)
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৫, ১১:২৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

শেষ বয়সেও জীবনযুদ্ধ ভূমিহীন ছকিনা বেওয়ার

ছকিনা বেওয়া। ছবি : কালবেলা
ছকিনা বেওয়া। ছবি : কালবেলা

ছকিনা বেওয়ার বয়স ৭৫ ছুঁইছুঁই। স্বামীকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। যেখানে রাত সেখানেই কাত। পেশা তার ভিক্ষাবৃত্তি। বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে গেছেন। নানা রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে। ঠিকমতো উঠে দাঁড়ানোর সামর্থ্য না থাকলেও পেটের দায়ে ছুটতে হচ্ছে। পা দুটোই তার একমাত্র বাহন। সকাল-সন্ধ্যা ঘুরে বেড়ান দুয়ারে দুয়ারে। কপালে জোটেনি বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতাও। পান না কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা। জীবন বাঁচাতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় এই বৃদ্ধার।

অসহায় ছকিনা বেওয়ার অস্থায়ী বসবাস গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ইসবপুর (পূর্বপাড়া) গ্রামের আব্দুর রশিদের বাড়িতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার স্বামী মেছের আলী ছিলেন দিনমজুর। নিজের কোনো জায়গাজমি ছিল না। তাদের প্রথম সন্তান সৈয়দ আলীর বয়স যখন ৫ বছর, তখন মেছের আলী মারা যান। ছকিনা তখন অন্তঃসত্ত্বা। এরপরই তার জীবনে ছায়া নেমে আসে। দুই শিশুসন্তান সৈয়দ আলী ও রঞ্জুকে বড় করে লালনপালনে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেন ছকিনা বেওয়া। থাকতেন প্রতিবেশীদের বাড়িতে।

স্বামীর মৃত্যুর ৪০ বছর পরও একইভাবে জীবন-জীবিকার লড়াই করছেন এই প্রবীণ নারী। তার দুই ছেলে বর্তমানে জেলার বাইরে থাকেন; কিন্তু কেউই খোঁজ নেন না মায়ের। যে বয়সে যত্ন আর বিশ্রামে থাকার কথা, সে বয়সে হেঁটে হেঁটে ভিক্ষা করছেন। একেক দিন একজনের বাড়িতে রাতযাপন করছেন। চরম দুর্বিষহ জীবন কাটছে তার। শেষ বয়সেও তপ্ত রোদ, কনকনে শীত আর বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে রোজগারের আশায় রাস্তায় বেরুতে বাধ্য হচ্ছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছকিনা বেওয়া বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ভিক্ষা করে খাই। নিজের জমিও নাই, ঘরও নাই। সরকার যদি আমাকে একটা ঘর আর ভাতা করে দিত, তাহলে শেষ বয়সে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম।’

আব্দুর রশিদ মিয়া নামে গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘ছকিনা বেওয়া বর্তমানে আমার বাড়িতে রাত্রিযাপন করছেন। তার কষ্টের শেষ নেই। সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত।’

ছকিনা বেওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা দরকার বলে জানান মোসলেম আলী নামে এক শিক্ষক।

ফরিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রঞ্জু মিয়া বলেন, ‘ছকিনা বেওয়ার এনআইডি কার্ড নেই। এ জন্য সহজে সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন না।’

ইউপি চেয়ারম্যান মামুন মণ্ডল মিলন বলেন, ‘ওই নারীর অবস্থা এতটা করুণ, তা জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে সহযোগিতা করা হবে।’

সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায় বলেন, ‘ছকিনা বেওয়ার তথ্য আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। তিনি বয়স্ক বা বিধবা ভাতা পাওয়ার যোগ্য। তৃতীয় কিস্তিতে তাকে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওয়তায় নিয়ে আসব।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শতাধিক ভুয়া পেজে ‘অশ্লীল বিজ্ঞাপন’, বিব্রত ডা. জাহাঙ্গীর

স্বাস্থ্য পরামর্শ / বয়স বেশি হলে ডাউন শিশু জন্মদানের শঙ্কা বাড়ে

ব্যাংকক থেকে আজ দেশে ফিরছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ

প্রকৌশলীদের উন্নয়ন ও সংস্কার নিয়ে আইইবি’র মতবিনিময় সভা 

সৈয়দপুরে শাটল বাস সার্ভিস চালু করল বিমান

প্রকৌশলীদের অধিকার আদায়ে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সার্জেন্ট হেলালের সাহসিকতায় ২ ছিনতাইকারী আটক

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের ‘মহান মে দিবস’ আজ

নোবিপ্রবির পুকুরে ছাত্র-ছাত্রীদের গোসলের ছবি ভাইরাল, প্রশাসনের সতর্কতা

রাজধানী থেকে পুরনো যানবাহন সরাতে অ্যাকশনে নামছে বিআরটিএ

১০

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর ইউএনওকে বদলি

১১

ববি প্রশাসনকে ‘মৃত’ ঘোষণা করে গায়েবানা জানাজা

১২

স্কুলের ১৮টি গাছ কাটলেন প্রধান শিক্ষক

১৩

শাহ আমানত বিমানবন্দরের রানওয়েতে কুকুর, ব্যবস্থা নিতে মেয়রকে চিঠি

১৪

আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে কুপিয়ে হত্যা

১৫

বাবরি মসজিদ বানাবেন পাকিস্তানি সেনারা : পাকিস্তানের সিনেটর

১৬

কাশ্মীর হামলার পর চাপে ভারতের মুসলিমরা, বেড়েছে দমনপীড়ন

১৭

ছাত্রদের ক্ষমতায় এনে দেশের ক্ষতি করা হয়েছে : সোহেল

১৮

সন্ধ্যা নদীতে বাঁধ নির্মাণের দাবি

১৯

মে মাসে হতে পারে ২টি ঘূর্ণিঝড়

২০
X