পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

অর্থের অভাবে হোমিওতে চলছে ক্যান্সার আক্রান্ত সাহাদুলের চিকিৎসা

সাহাদুল ইসলাম। ছবি : কালবেলা 
সাহাদুল ইসলাম। ছবি : কালবেলা 

প্রায় চার বছর আগে ঠোঁটে সামান্য জ্বরঠোসা হয়েছিল সাহাদুল ইসলামের (৫৫)। ধীরে ধীরে সেটি ফোঁড়ায় পরিণত হয়। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করিয়েও ভালো না হওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রথমে আলসার ধরা পড়ে। পরে বায়োপসি করলে জানা যায়, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতে বললেও দারিদ্র্যের কারণে তা আর সম্ভব হয়নি।

তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে শুরু করেন স্থানীয়ভাবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা। তখন থেকে মাসে মাত্র ৮০-৯০ টাকার হোমিও ওষুধ দিয়েই নামমাত্র চলছে সাহাদুলের মনকে বুঝ দেওয়া এই ক্যান্সারের চিকিৎসা। তবে এতদিনে তার মুখমণ্ডলের প্রায় ৩০ শতাংশ পঁচে গেছে। এখনই উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হলে, হয়ত তিনি আর বেশিদিন বাঁচবেন না। এ জন্য প্রয়োজন মানবিক সহায়তা।

সাহাদুল ইসলামের বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার দশগাঁ গ্রামে। ব্যক্তিগত জীবনে তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে। এক সময় গরুর দালালি করে সংসার চালালেও, অসুস্থতার পর তা আর সম্ভব হয়নি। বড় মেয়েকে ধারদেনা করে বিয়ে দিয়েছেন, আর ছোট মেয়ে পড়ছে নবম শ্রেণিতে।

বর্তমানে তার স্ত্রী লাভলী বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে, দিনমজুরি করে, কখনো পূজা বা নির্বাচনের সময় অস্থায়ী আনসার হিসেবে কাজ করে কোনো মতে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু এতে যা আয় হয়, তা দিয়ে শুধু হোমিওপ্যাথির সান্ত্বনামূলক চিকিৎসা চালানো সম্ভব, উন্নত চিকিৎসার খরচ জোগানো সম্ভব নয়।

সরেজমিনে সাহাদুলের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তিনি মুখে মাস্ক ও গলায় গামছা বেঁধে বসে আছেন। মাস্ক ও গামছা সরাতেই তার মুখের যে বিভৎস চেহারা দেখা যাবে তা দেখে যে কারোরই গাঁ শিউরে উঠবে।

সাহাদুল ইসলাম বলেন, মুখের এই অবস্থা হওয়ার পর থেকে আমি বাড়ির বাইরে যেতে পারি না। ছোট বাচ্চারা আমাকে দেখে ভয় পায়। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করতে পারছি না। ছোট মেয়েটা বড় হয়েছে, তাকে বিয়ে দিতে হবে। আমি বাঁচতে চাই, ছোট মেয়েটার বিয়ে দিতে চাই। এ জন্য আমি সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।

তার স্ত্রী লাভলী বেগম বলেন, কিছু দিন আগে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে সাহায্যের জন্য গিয়েছিলাম। রিপোর্টগুলো ২০২১ সালের হওয়ায়, নতুন রিপোর্টসহ ডাক্তারি সার্টিফিকেট জমা দিলে তারা সাহায্যের ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, ডাক্তার দেখানোর মতো টাকাও নেই এই মুহূর্তে তার কাছে।

সাহাদুলের মেয়ে সামিয়া আক্তার সেতু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সবাই সবার বাবার সঙ্গে মার্কেটে যায়, স্কুলে যায়। কিন্তু আমি আমার বাবাকে নিয়ে কোথাও যেতে পারি না। কারণ মাস্ক বা গামছা খুললেই সবাই ভয় পায়। আমি চাই আমার বাবা বেঁচে থাকুক। সবাই দয়া করে আমার বাবাকে বাঁচাতে সাহায্য করুন।

সাহাদুলের প্রতিবেশীরা বলছেন, সাহাদুলকে বাঁচাতে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন, যা অনেক ব্যয়বহুল। সরকার ও সমাজের দানশীল ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে হয়তো তিনি নতুন জীবন ফিরে পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসরায়েলের ৬ গবেষণাগার ধ্বংস, অপূরণীয় ক্ষতি

বান্দরবানে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা শুক্রবার

নির্বাচনের আগেই হাসিনার প্রতিটি হত্যাযজ্ঞের বিচার চায় হেফাজত

আশুরা উপলক্ষে ডিএমপির সভা 

আরেক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ফজলে করিম, নদভী ও লতিফ

কাতারের আমিরকে যা উপহার দিলেন খালেদা জিয়া

চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার

‘বিএনপি হয়তো মনে করছে তারা ক্ষমতায় আসবে’

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগের নিয়োগ ব‍্যবস্থা বহাল মানে ফ‍্যাসিবাদ থাকা : মঞ্জু

১০

চট্টগ্রামে করোনার সঙ্গে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গুও

১১

শেখ হাসিনার পিএ জাহাঙ্গীরের ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা ফ্রিজ

১২

গাজায় ‘যুদ্ধবিরতি’ শিগগিরই, জানালেন ট্রাম্প

১৩

ই-হকের ‘শামীম স্যার’ কি মোশাররফ করিম?

১৪

কেন কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতেই হামলা চালাল ইরান?

১৫

ডেঙ্গু একদিনে আরও দুজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩২৬ 

১৬

কলম্বোয় দিনশেষে লঙ্কানদের দাপটে ব্যাকফুটে শান্তরা

১৭

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

১৮

জবি ছাত্রদলের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে

১৯

মাসুদ এখন ওসি থেকে এসআই

২০
X