রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা মহিলা দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী একরামুল হক। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) তার মোটরসাইকেলটি মুন্ডুমালা পৌর বাজারে বড় মসজিদের পাশে রেখে জুমার নামাজ পড়তে যান। নামাজ শেষ করে এসে দেখেন তার মোটরসাইকেলটি সেখানে নেই।
এর মাত্র পাঁচ দিন আগে ২০ আগস্ট আব্দুল জলিল নামের বাধাইড় ইউপির এক গ্রামের চকিদারের মোটরসাইকেল বাজারের গোল চত্বরে রেখে চা খেতে রেস্তোরাঁয় যান। পরে এসে দেখেন তার মোটরসাইকেলটি চুরি হয়ে গেছে। ওই দিনই মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে চুরির একটি লিখিত অভিযোগ দেন। মোটরসাইকেলটির এখন পর্যন্ত কোনো হদিস করতে পারেনি পুলিশ।
ভুক্তভোগী শুধু মাদ্রাসার অফিস সহকারী একরামুল হক ও গ্রামের চকিদার আব্দুল জলিল একা নন। মুন্ডুমালা বাজার থেকে মোটরসাইকের চুরি এখন নিত্যদিনের ঘটনা।
চলতি আগস্ট মাসে বাজার থেকে চারটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। আর গত এক বছরে শুধু মুন্ডুমালা বাজার থেকে ২০টি ও উপজেলার আশপাশ থেকে আরও পাঁটির বেশি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে।
চুরির হওয়ার পরেই প্রায় সবাই তানোর থানায় এবং মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এসব ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উদ্ধার হয়নি মোটরসাইকেল। এতে বাসিন্দাদের মধ্যে মোটরসাইকেল হারানোর আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বাজার থেকে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র মাত্র ২০০ থেকে আড়াই শ মিটার দূরে। বাজারে প্রায় সব সময়ই পুলিশ সদস্যরা থাকেন। অথচ চোরদের গ্রেপ্তারে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। খোঁজ নিয়ে এমন আরও ঘটনা জানা যায়। ১৭ আগস্ট মুন্ডুমালা ফজর আলি মোল্লা ডিগ্রি কলেজের বাইরে মোটরসাইকেল রেখে এইচএসসি পরীক্ষা দেয় এক পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা শেষে বের হয়ে দেখেন তার মোটরসাইকেলটি সেখানে নেই। চুরি হয়ে গেছে।
এর আগে ২ আগস্ট সাদিপুর গ্রামের কায়েশ উদ্দিনের ছেলে আবু বক্কর নামের এ ব্যক্তির মোটরসাইকেল বাজারের গোল চত্বর থেকে চুরি হয়। তিনি ওই দিনই তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
মুন্ডুমালা পৌরসভায় ট্রাকচালকের কাজ করেন তপন কুমার মণ্ডল। তার মোটরসাইকেলটি পৌর চত্বর থেকে আট মাস আগে চুরি হয়।
তপন কুমার বলেন, ‘পৌরসভার সিসি ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে চোরের দল তার মোটরসাইকেলটি নিয়ে যাচ্ছে। সে দিনই মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ দেয়া হয়। পুলিশ এসে সিসি ক্যামেরার ছবি নিয়ে যায়। আট মাস হলো এখন পর্যন্ত কোনো হদিস বের করতে পারেনি পুলিশ।’
এসব বিষয়ে মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘চোরের সিন্ডিকেটকে ধরার জন্য পুলিশ কাজ করছে। বাজারে তিনটি বণিক সমিতি থাকা সত্ত্বেও একটি সিসি ক্যামেরা নেই। সিসি ক্যামেরা থাকলে সিন্ডিকেটের স্থানীয় কেউ থাকলে সহজে চেনা যেত। আমরা বাজারের সবাইকে সচেতন করতে কাজ শুরু করব।’
তানোর থানার অফিসাস ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমি থানায় এক-দেড় মাস হলো যোগদান করেছি। মুন্ডুমালা বাজার থেকে এত মোটরসাইকেল চুরি দুঃখজনক ঘটনা। আমরা এ বিষয়ে জোরাল পদক্ষেপ নেব।’
সহকারী পুলিশ সুপার (তানোর-গোদাগাড়ী সার্কেল) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘মুন্ডুমালা বাজারের সিসি ক্যামেরা না থাকায় মোটরসাইকেল চোরের এ সিন্ডিকেটকে সহজে ধরা যাচ্ছে না। শুধু পুলিশ দিয়ে হবে না। মোটরসাইকেল মালিকদেরও সচেতন হতে হবে। পুলিশ তদন্ত করছে। এ সিন্ডিকেট অল্প সময়ে ধরা পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তবু অল্প কিছু দিনের মধ্যে মুন্ডুমালা বাজারে বণিক সমিতিসহ স্থানীয় জনসাধারণদের সচেতন করতে পুলিশ সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাবে।’
মন্তব্য করুন