কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়ন থেকে বরইতলী ইউনিয়নের বানিয়ারছড়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চাঁদা আদায় করছেন একজন ছাত্রদল নেতা। রাতে গাড়ি ধাওয়া করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
হারবাং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি এএসএম ইব্রাহিম মানিক ও তার নেতৃত্বাধীন একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট এই চাঁদা আদায় করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
স্থানীয় সূত্র ও সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে প্রতিদিন রাত ১২টার পর থেকেই ছয় থেকে সাতজনের একটি দল কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে মহাসড়কে বের হয়। তারা বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়িকে ধাওয়া করে, প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে চাঁদা আদায় করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন একজন বহিরাগত মো. বেলাল, যিনি মানিকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
একাধিক পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা মানিক ও বেলালের সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না, কারণ প্রতিশোধের আশঙ্কা রয়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া একটি কল রেকর্ডে ভুক্তভোগী একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘রাতের অন্ধকারে ছয় থেকে সাতটি মোটরসাইকেল নিয়ে আমার লাকড়ির গাড়িকে ধাওয়া করে ইনানী রেস্টুরেন্টের সামনে থামিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।’
স্থানীয় বিএনপি নেতা জাবেদ বলেন, ‘গাছের ট্রলি নিয়ে ফেরার সময় মানিক ও বেলাল আমার গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং অর্থ দাবি করে। পরে আমি উপস্থিত হলে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল সভাপতি ইব্রাহিম মানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নই। বিস্তারিত জানতে হলে সামনাসামনি দেখা করুন।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
হারবাং ইউনিয়ন বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, মানিকের নেতৃত্বাধীন একটি চক্র সরকার পতনের পর থেকে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে। ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে একাধিকবার সতর্ক করা হলেও তারা কর্ণপাত করেনি।
ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুবেল সিকদার বলেন, ‘এমন কোনো ছেলে ছাত্রদলে আছে বলে জানা নেই যে মানিকের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। তার কর্মকাণ্ডে আমরা ইউনিয়ন বিএনপি হিসেবে চরম বিব্রত।’
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, ‘দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’
হারবাং ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. বাবুল কালবেলাকে বলেন, ‘ছাত্রদল সভাপতির নেতৃত্বে সিন্ডিকেট চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত। এ বিষয়ে আমরা দলের শীর্ষ নেতাদের জানিয়েছি।’
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন