চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের পাশের প্রাঙ্গণকে সর্বজনীন নাগরিক মুক্তাঙ্গন ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম নামের একটি সংগঠন।
সোমবার (১২ মে) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস এবং এর আশপাশের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ (প্রায় ৩ দশমিক ৮৯ একর) অনেক বছর পর্যন্ত সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি উন্মুক্ত মিলনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে স্থানটি ব্যবসায়িক ভিত্তিতে ইজারা দেওয়া হয়। ওই সময় সেখানে সীমানাপ্রাচীর ও স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে এই উন্মুক্ত পরিসর ধ্বংস করা হয়। তবে ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এসব অপরিকল্পিত স্থাপনা অপসারণ করে। জঞ্জালমুক্ত সার্কিট হাউস ময়দান নিশ্চিতভাবে আবারও নগরবাসীকে উদ্বেলিত করেছিল। চট্টগ্রামবাসী পুনরায় আগের সে উন্মুক্ত পরিসর ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জঞ্জালমুক্ত করার পর উন্মুক্ত এ পরিসরের সীমানা বরাবর কংক্রিটের খুঁটি ও লোহার গ্রিল দিয়ে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তখন আশ্বস্ত করা হয়েছিল, ঐতিহ্যবাহী এ প্রাঙ্গণ জনগণের মুক্তাঙ্গন হিসেবে থাকবে। তবে সম্প্রতি তারা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছেন, এ মুক্তাঙ্গনের সীমানার ভেতরে মালিকানা দাবিমূলক কর্তৃত্ব এবং জনসাধারণের প্রবেশাধিকারের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে নাগরিক হিসেবে তারা শঙ্কিত বোধ করছেন। কেননা, এ ধরনের নির্দেশনা মনস্তাত্ত্বিক ভীতির সঞ্চার করে।
সার্কিট হাউসের ঐতিহাসিক চত্বরে কোনো রকম স্থাপনা নির্মাণ না করে একটি সর্বজনীন মুক্তাঙ্গন হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়ে বলা হয়, ১৯১৩ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত সার্কিট হাউসের উন্মুক্ত পরিসর সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে জনবান্ধব নাগরিক মুক্তাঙ্গনে পরিণত করা হোক। এ পরিসর নগরের কেন্দ্রে। নগর সম্পদ হিসেবেও এর অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। ১৯৬১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, সব কটিতে সার্কিট হাউসের সম্মুখের চত্বরটি একটি উন্মুক্ত পরিসর। জনস্বার্থেই এটি উন্মুক্ত ও অবিকৃত রাখা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জেরিনা হোসেন বলেন, নগরের উন্মুক্ত পরিসর নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। উন্মুক্ত পরিসরের জায়গায় ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। অথচ নগরে যেভাবে মানুষ বাড়ছে, সেভাবে উন্মুক্ত পরিসর ও মাঠ-ময়দানের পরিমাণ বাড়ছে না, বরং কমছে। এ রকম শহরে সুস্থভাবে থাকার সুযোগ নেই।
সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, সার্কিট হাউসের সামনের চত্বরে যারা শিশুপার্ক করেছিল, তারা অন্যায় করেছিল। এখন সেখানে আবার স্থাপনা নির্মাণের কথা শোনা যাচ্ছে, যা কোনোভাবে কাম্য নয়। এ উন্মুক্ত পরিসরের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রকৌশলী এবিএম বাসেত, স্থপতি আহমেদ জিন্নুর চৌধুরী, অধ্যাপক নাজিম উদ্দিন, অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব জাফর আলম, প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম, পরিবেশবিদ তসলিমা মুনা।
জানা যায়, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মুখ চত্বরের জায়গার মালিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ২৩ বছর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ জায়গা ইজারা নিয়েছিল সিটি করপোরেশন। ১৯৯২ সালে শিশুপার্ক স্থাপনের জন্য ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস লিমিটেড নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
ইজারার মেয়াদ শেষ হলে ২০২০ সালে মাসিক মাত্র দেড় লাখ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আবারও ১৫ বছরের চুক্তি করে সিটি করপোরেশন। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে পার্কটি উচ্ছেদ করা হয়।
মন্তব্য করুন