দুপুর হওয়ার আগেই শ্রেণিকক্ষ খালি করে চলে যায় শিক্ষার্থীরা। আর জোহরের আজান পড়লেই চলে যান প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনায় অফিস সহায়ক বিদ্যালয়ের সকল শ্রেণিকক্ষ, অফিসকক্ষ এবং প্রধান শিক্ষকের কক্ষ বন্ধ করে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত পতাকা উত্তোলন করে বসে থাকেন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। এভাবেই এপ্রিল মাস থেকে বিদ্যালয়টি চলে আসছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সোমবার (২৬ মে) সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে কাজিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে এ অভিযোগের সত্যতা মেলে। বিদ্যালয় ছুটি হওয়ার কথা বিকেল ৪টায় কিন্তু নিয়মের তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন এভাবেই চালিয়ে আসছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক।
সরেজমিনে দুপুর আড়াইটায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন রয়েছে কিন্তু অফিসকক্ষ, শ্রেণিকক্ষ এমনকি প্রধান শিক্ষকের কক্ষেও তালা ঝুলছে। ছাত্রছাত্রী নেই, সুনসান নীরবতা। বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে কিষান-কিষানি ধান-খড় শুকাতে ব্যস্ত।
বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ইসমাইল হোসেন কালবেলাকে বলেন, বারোটা-একটার দিকে ছাত্রছাত্রীরা তাদের বাড়িতে চলে যায়। এর পাশাপাশি জোহরের আজানের পরপরই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে চলে গেছেন। আমাকে প্রধান শিক্ষক বলেছেন- নির্ধারিত সময় পর্যন্ত পতাকা উত্তোলন রাখতে। বিদ্যালয় প্রায় ৩০০ জনের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। ছুটির বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।
এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা বলেন, অন্যান্য বিদ্যালয় প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। আর আমাদের এই বিদ্যালয়ের চিত্র ভিন্ন। বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে এসে ক্লাসে না গিয়ে কার্যালয়ে বসে থাকেন। দুপুর ১টা বাজলেই ছুটি দিয়ে চলে যান। এটি এ বিদ্যালয়ের নিত্যদিনের চিত্র। এভাবে চলতে থাকলে অত্র অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা তাদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক অভিভাবক সদস্য আবদুল মমিন কালবেলাকে বলেন, আমরা নিয়মিত এই অবস্থা দেখছি। কখনোই দেখিনি চারটা পর্যন্ত বিদ্যালয় চলে। এ বিদ্যালয়ের অবস্থা অনেক খারাপ। নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায়। এতে করে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পাশাপাশি স্কুলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
স্থানীয় অভিভাবক জাহাঙ্গীর আলম কালবেলাকে বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ যেমন সঠিক সময়মতো বিদ্যালয় আসে না। তেমনি আবার দুপুরের পরে ছাত্র-ছাত্রী অথবা শিক্ষকগণ কাউকে পাওয়া যায় না। আমরা এ অবস্থার পরিত্রাণ চাই। আমরা চাই বিদ্যালয়টি নিয়মিত চলুক। এলাকার শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা পাক।
এভাবে নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রতিদিন বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার কথা স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক মো. মামুনুর রশিদ মোবাইল ফোনে কালবেলাকে বলেন, আমরা দুইটা তিনটা পর্যন্ত থাকি। দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা চলে যায়। এ জন্য অনেক শিক্ষকও চলে যান। একটু এলোমেলো হয়েছে। আপনার সঙ্গে আমি সামনাসামনি কথা বলব।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আনন্দ কুমার মন্ডল কালবেলাকে বলেন, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি বিকেল ৪টার আগে ছুটি দিয়ে চলে যায় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তারা এভাবে ছুটি দিয়ে চলে যেতে পারেন না। যেহেতু আমরা বিষয়টা আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, স্যারকে বলে আমরা এর ব্যবস্থা অবশ্যই নেব।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনামিকা নজরুল কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে প্রধান শিক্ষককে ডাকা হবে। কোনো সমস্যা আছে কিনা তার কাছে জানতে চাওয়া হবে। প্রধান শিক্ষক এটা যদি করে থাকে তাহলে ওনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন