জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। দায়িত্ব দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। কাজও শুরু হয় সড়ক সংস্কারের। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই হাতের টানেই উঠে যাচ্ছে সেই সড়কের কার্পেটিং।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের একটি সড়ক সংস্কারের পর এমন অবস্থা। সংস্কারকাজ শেষ না হতেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে যে কেউ হাত দিয়ে টান দিলেও কার্পেটিং উঠে আসছে।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গোপালপুর পাকা সড়ক থেকে (এক্সেন হাউজ) হাসিমপুর পাকা সড়ক উন্নয়নের ৭৩০ মিটার কাজটি ৫০ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭৩ টাকা চুক্তিমূল্যে পান পোরশা উপজেলার মতিউর রহমান নামে ঠিকাদার। পরে কাজটি কিনে নেন মান্দা উপজেলার শহিদুল ইসলাম। কাজটির দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন উপসহকারী প্রকৌশলী আল-আমিন।
অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কারে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কারণে সড়কের এই দশা। স্থানীয় এলজিইডির গাফিলতির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়সারাভাবে কাজ করেছে। ফলে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ, সড়কের কাজে মানহীন ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বৃষ্টি চলাকালীন সময় শুধু সড়কের জমে থাকা বৃষ্টির পানি অপসারণ করেই চলছে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। সঠিক তদারকির অভাবে যেনতেন ভাবে কাজের ফলে বর্ষা মৌসুমেই এ সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
সরেজমিনে উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার কার্পেটিং বিভিন্ন জায়গায় উঠানো। ছোট্ট বাচ্চাদের দেখা যায় কার্পেটিং তুলে খেলা করছে। স্থানীয়রা বলেন, গত ২৫ মে থেকে রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। শুরু থেকে ধুলাবালু ঠিকমতো পরিষ্কার করেননি, রাস্তায় বিটুমিনের আবরণ নেই। এর মাঝে বৃষ্টির মধ্যে সড়কটিতে নিম্নমানের কাজ হচ্ছিল। বাধা উপেক্ষা করে অফিসের লোকজনকে ম্যানেজ করে ঠিকাদার কাজ অব্যাহত রাখেন।
স্থানীয়রা বলেন, বৃষ্টির মাঝেই চটের বস্তা দিয়ে রাস্তার পানি মুছে তারপর পিচ ঢালাই করা হয়েছে। আমরা অশিক্ষিত মানুষ হলেও জানি বৃষ্টির মধ্যে পিচ ঢালাই করলে সেটা থাকে না। কিন্তু সেটা কি কন্ট্রাক্টর আর ইঞ্জিনিয়াররা জানেন না।
মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব। জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে। কতটা দুর্নীতি ও অনিয়ম হলে সড়কটির এমন পরিণতি হয়। সড়কটি সংস্কারে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়েছে, তাই হাতের টানেই উঠে যাচ্ছে।’
রাস্তার কাজে তদারকির দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আল-আমিন কালবেলাকে বলেন, শেষ গাড়িতে মিক্সিংয়ে একটু সমস্যা হয়েছিল। আর বৃষ্টির মধ্যে কাজ করার জন্য ১৫ মিটারের মতো সড়কে সমস্যা হয়েছে। আমি মিক্সিং সাইটে ছিলাম।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঠিকাদার শহিদুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তা রিসিভ হয়নি।
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শাহিনূল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ঠিকাদারের একটু সমস্যা হয়েছে, এটা শুনেছি। আর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেছি। ঠিকাদার ফের কাজ করে দিচ্ছেন।
নওগাঁ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি জানি এবং সেটা ঠিক করতে বলেছি। তবে বৃষ্টির মধ্যে কাজ করতে পারে না জানিয়ে তিনি বলেন, কাজের কোনো সমস্যা নেই। কাজ শুরুর পর বৃষ্টির কারণে একটু সমস্যা হয়েছে। ঠিকাদারকে ঠিক করে দিতে বলেছি। এ ছাড়া এখনো ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হয়নি।
মন্তব্য করুন