মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহার টানা ১০ দিনের ছুটিতে পর্যটক বরণে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন সাগর কন্যা কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। এবার দীর্ঘ ছুটিতে দেশের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো প্রায় বুকিং হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, আবহাওয়া ঠিক থাকলে কুয়াকাটায় পর্যটকের ঢল নামবে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ হোটেলে শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কক্ষের আগাম বুকিং হয়ে গেছে। তবে ১০-১১ জুন পর্যটকে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা জানালেন অনেকেই। এ দুই দিনের জন্য আগাম বুকিং পাওয়া যাচ্ছে। হোটেল মিয়াদ ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ জানান, তাদের ১০-১১ জুনে অলরেডি ৪০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
হোটেল তাজওয়ার কর্তৃপক্ষ জানান, তাদেরও ওই তারিখে আগাম বুকিং রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) থেকে মূলত সরকারি ছুটি কার্যকর হয়েছে। আগামী ১৫ জুন অফিস আদালত সচল হবে। ৭ জুন থেকে কোরবানি শুরু হবে। যা চলবে ৯ জুন পর্যন্ত। এ জন্য ১০-১১ জুন এই দুইদিন মূলত বিনোদন, ভ্রমণের মুখ্য সময়।
এই পিক টাইমে কুয়াকাটায় লাখো পর্যটকের সমাগম হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানালেন কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ। ১২ জুন পর্যন্ত পর্যটকের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি থাকার কথা বললেন অধিকাংশরা। তবে আধুনিক সেবা সংবলিত ও তারকা মানের হোটেলগুলোতে এখনও গেস্ট রয়েছে। তাদের ৯-১০-১১ জুনে এখনই শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
এছাড়াও পর্যটকের ভিড়ে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ যানবাহনের অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কিংবা অশোভন আচরণ বন্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন কেউ কেউ। বাসে আসা পর্যটককে নির্দিষ্ট হোটেলে নেওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থার কথাও জানালেন একাধিক হোটেল কর্তৃপক্ষ।
হোটেল রাজমহলের ম্যানেজার জুয়েল ফরাজি বলে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ইতোমধ্যে মুঠোফোনে ভালোই সাড়া পাচ্ছি। টানা ১০ দিনের ছুটিতে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক হবে। আশা করছি পেছনের লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারব। এ সময় তিনি হোটেলে রাজমহলে ১০% ডিসকাউন্ট এর ব্যবস্থা রয়েছেও।
হোটেল খান প্যালেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল খান বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১০ দিনের সরকারি ছুটি রয়েছে। মূলত ৯ জুন থেকে কুয়াকাটায় ১১ জুন পর্যন্ত পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়ের সম্ভাবনা থাকছে। পর্যটক বরণে কুয়াকাটার ছোট-বড়-মাঝারি আধুনিক ও তারকা মানের অন্তত ২৩০টি হোটেল-মোটেল রিসোর্ট এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি এমএ মোতালেব শরীফ বলেন, ইতোমধ্যেই পর্যটক বরণে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকজন এখানে আসা পর্যটকের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে সচেষ্ট রয়েছেন।
ঈদ পরবর্তী আগত পর্যটক-দর্শনার্থীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি তিনটি স্পটে বিশেষ প্রহরার ব্যবস্থা থাকবে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পরিদর্শক তাপস চন্দ্র রায়।
মহিপুর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, পর্যটকের নিরাপত্তা বিধানে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সোচ্চার।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার লম্বা ছুটিকে কেন্দ্র করে কুয়াকাটা লাখো পর্যটকের সমাগম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ইতোমধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কুয়াকাটা দর্শনীয় স্পটগুলোতে আলাদা আলাদা সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা সর্বদা প্রস্তুত থাকবে টুরিস্ট পুলিশ।
কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, পর্যটকের সেবা নিশ্চিতে সকল ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন