পরীক্ষা শুরুর মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় কিট শেষ হয়ে যাওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে করোনা পরীক্ষা। গত তিন দিনেই পাঁচজনের করোনা আক্রান্তের পর আতঙ্ক ছড়াচ্ছে খুলনাজুড়ে। এরই মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ায় তা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা তৈরি করেছে।
কর্তৃপক্ষ মুখে সার্বিক প্রস্তুতির কথা জানালেও ডেঙ্গু ও করোনা একসঙ্গে মোকাবিলায় খুলনার হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে না পারলে পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হবে।
ছড়াচ্ছে করোনা, পরীক্ষা বন্ধ
খুলনায় গত তিন দিনেই পাঁচজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই খুলনা শহরের বয়রা এলাকার বাসিন্দা। যখন করোনা চোখ রাঙাচ্ছে এবং পরীক্ষা করা প্রয়োজন তখনই হাসপাতালের র্যাপিড কিট ফুরিয়ে গেছে। এখনো চালু করা যায়নি আরটিপিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা। কবে নাগাদ পরীক্ষা শুরু হবে, তাও জানে না কেউ।
খুলনায় একমাত্র আরটিপিসিআর করোনা পরীক্ষা করা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কলেজটির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহনাজ পারভীন কালবেলাকে বলেন, দীর্ঘদিন অচল থাকা ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আরটিপিসিআর মেশিনটি মেরামত প্রয়োজন। এরই মধ্যে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে শিগগির আরটিপিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা সম্ভব হবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) খুমেক হাসপাতালে ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে মো. হারুন নামের এক রোগীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা ভালো। তিনি বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নেবেন। হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সুমাইয়া আক্তার সুস্থ হওয়ায় তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে করুনা বেগম নামের একজন ভর্তি আছেন।
আরও জানা গেছে, এর আগে গত মঙ্গলবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তানিয়া বেগম নামের এক নারীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়, তার বাড়ি নগরীর বয়রা এলাকায়। একই দিনে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে নগরীর নিরালা এলাকার বাসিন্দা সুমাইয়া আক্তারের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছিল। বুধবার করুনা নামে ৬০ বছর বয়সী এক নারীর শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তিনিও বয়রা এলাকার বাসিন্দা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের পর গত শনিবার (১৪ জুন) থেকে আবারও শুরু হয় করোনা পরীক্ষা। হাতে থাকা মাত্র ৭৫টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট দিয়ে যাত্রা শুরু হয় করোনা পরীক্ষা, যা পাঁচ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু, প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ নেই
খুলনায় মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক যখন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন শুরু হচ্ছে ডেঙ্গু প্রকোপ। চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে তিনজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে খুলনায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি চলছে। বৃষ্টির পর রোগটি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে ডেঙ্গু মোকাবিলায় সিটি করপোরেশেনের প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নয় খুলনার মানুষ।
জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) পর্যন্ত ২৩ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে তিনজন। গত মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে খুলনায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ফলে এবার আগেভাগে সতর্ক করছেন নাগরিক সমাজ।
বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী নুরি ইসলাম বলেন, বিকেল হলেও মশার উপদ্রবে বাসায় থাকা দায় হয়ে যায়। আমরা নিয়মিত মশার কয়েল ব্যবহার করি। বৃষ্টি শেষ হলে সাধারণত ডেঙ্গু বাড়ে বা এডিস মশার বংশ বিস্তার হয়। কিন্তু এর বিপরীতে সিটি করপোরেশন তো তেমন পদক্ষেপ নেয়নি। এবার তো সাধারণ রোগীরা মহাসংকটে পড়বে। জ্বর হলে ডেঙ্গু না করোনা, এটা নিয়ে সাধারণ রোগীরা ভোগান্তিতে পড়বে।
খুলনার নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার কালবেলাকে বলেন, খুলনায় এরই মধ্যে বয়রা এলাকায় করোনার জন্য হটস্পট হয়েছে কি না, বোঝা যাচ্ছে না। আক্রান্ত পাঁচজনের মধ্যে চারজনই বয়রা এলাকার। এখন বয়রা এলাকার মানুষকে ব্যাপক হারে পরীক্ষা করাতে হবে। এখন শুনি টেস্টের কিট শেষ। এদিকে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিড টেস্ট যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন আরটিপিসিআর। আরটিপিসিআর কবে চালু হবে জানি না।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের নাকি সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে, আমার মনে হয় সঠিকভাবে এবার প্রস্তুতি না নিলে এ বৃষ্টির মৌসুমে ডেঙ্গু ও করোনা একত্রে খুলনার মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এখনই কঠোরভাবে ডেঙ্গু ও করোনা মোকাবেলায় তৎপর হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, সর্বশেষ ২০২৩ সালে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে এখানে করোনা শনাক্ত করা হয়েছিল। এরপর ২০০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা হাসপাতালটিতে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এরমধ্যে নতুন করে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় জরুরি বিভাগের ভেতরে মোট ৪০টি বেড প্রস্তত করা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ এবং আলাদা অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে।
মন্তব্য করুন