নরসিংদী শহরে মিনহাজুল আবেদীন ওরফে রেজভী (৩৫) নামে এক যুবককে গুলির পর কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তারসহ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু ককটেল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
সোমবার (৩০ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের পূর্ব ব্রাহ্মন্দী এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ তৈয়বুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন।
নিহত রেজভী রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ইন্টারনেট ও ডিশ ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের দুই বন্ধু মিনহাজুল আবেদীন ওরফে রেজভী এবং তৈয়বুর রহমান। রেজভীর গ্রামের বাড়ি রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের আগানগর গ্রামে এবং তৈয়বের গ্রামের বাড়ি একই ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামে। এ সুবাদে এ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ডিশের ব্যবসা একসময় যৌথভাবে করতেন এ দুজন। একপর্যায়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে তৈয়বকে ব্যবসা থেকে বের করে দেন রেজভী। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রেজভীকে সরিয়ে ওই ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেন তৈয়ব। রেজভী ওই ব্যবসায় আবার ফিরতে চাইলে আলোচনার নামে সোমবার (৩০ জুন) রাতে তৈয়বের পূর্ব ব্রাহ্মন্দীস্থ ভাড়া বাসায় আসতে বলে। রাতে তৈয়বের ভাড়া বাসায় রেজভীসহ ৩ জন গেলে প্রথমে তৈয়ব বাসায় ছিলেন না। পরে বাসার বাইরে রেজভী তৈয়বের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এক পর্যায়ে তৈয়ব বাসায় এলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রেজভীকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় রেজভী দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তারাও তার পিছু নেয় এবং রেজভীর কোমর ও মাথায় একাধিক গুলি করে। বাসাটি থেকে ২০ গজ দূরের একটি গলিতে লুটিয়ে পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
অভিযুক্ত তৈয়বের বোন শাকিলা আক্তারের দাবি, রাতে তাদের বাসায় তৈয়ব ছিলেন না, এছাড়া রেজভীকেও কেউ ডেকে আনেনি। বরং রেজভী তার দলবল নিয়ে তাদের বাসায় এসে চিৎকার করে সবাইকে বাসা থেকে বের হয়ে আসতে বলে এবং বিভিন্ন হুমকি দেয়। ওই সময় তারা ভয়ে দরজা বন্ধ করে ঘরের ভিতর অবস্থান করছিলেন। পরে কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে তারা কিছুই জানেন না বলে জানান।
নিহতের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন অভিযোগ করে বলেন, রেজভীকে হত্যা করার জন্যই সম্প্রতি বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল তৈয়ব। রাতে কথা বলার নামে তাকে ডেকে এনে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে তার দলবল।
নরসিংদী মডেল থানার উপপরিদর্শক বেলাল আহমেদ জানান, নিহত রেজভীর কোমর ও মাথায় একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া তার ডান কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু চামড়ার অংশ লেগে ছিল, আর বাঁ হাতের তালুতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। পুলিশ এজাহারনামীয় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, নিহত মিনহাজুল আবেদীন ওরফে রেজভীর বিরুদ্ধে ডাকাতি, অপহরণ, অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ৮টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে অভিযুক্ত তৈয়বের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে।
মন্তব্য করুন