ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অনিন্দ্যসুন্দর বিরল পাখি জলময়ূর

অনিন্দ্যসুন্দর নয়নাভিরাম পাখি জলময়ূর। ছবি : সংগৃহীত
অনিন্দ্যসুন্দর নয়নাভিরাম পাখি জলময়ূর। ছবি : সংগৃহীত

লম্বালেজী অনিন্দ্যসুন্দর নয়নাভিরাম পাখি জলময়ূর। এটি বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। নামের সঙ্গে ময়ূর যুক্ত থাকলেও এগুলো সে প্রজাতির পাখি নয়। ময়ূরের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।

শস্যদানা, জলজ ফল ও কীটপতঙ্গ মূলত জলময়ূরের খাবার। বিল, হাওর-বাঁওড় বা বড় জলাশয়ে এদের বাস। একসময় প্রচুর দেখা গেলেও এখন জলময়ূর তেমন একটা দেখা যায় না। টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বিরল এ পাখির দেখা পেয়েছেন কামাল হোসেন নামের এক সৌখিন ফটোগ্রাফার।

জানা গেছে, ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা লেজসহ জলময়ূর পাখির দেহের দৈর্ঘ্য ৩৯ থেকে ৫৮ সেন্টিমিটার। ওজনে পুরুষ ১১৩ থেকে ১৩৫ গ্রাম এবং স্ত্রী প্রজাতির পাখি ২০৫ থেকে ২৬০ গ্রাম ওজনের হয়। পাখিটি হাওর, বিল, হ্রদ ও মিঠাপানির জলাভূমিতে বাস করে। গ্রীষ্মকালে একাকী বা জোড়ায় ও শীতকালে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করে। ভাসমান পাতার ওপর হেঁটে হেঁটে জলজ উদ্ভিদে থাকা পোকামাকড় ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী, জলজ উদ্ভিদের কচি পাতা, অংকুর ও বীজ খায় জলময়ূর।

এ পাখির তিন ধরনের প্রজাতি রয়েছে। নেউ, নেউপিপি এবং পদ্মপিপি বা মেওয়া। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) পাখিটিকে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ তালিকাভুক্ত করেছে।

ফটোগ্রাফার কামাল হোসেন বলেন, ঘাটাইলের বিস্তীর্ণ বনভূমির গাছপালা, বিল, খাল, নদী এলাকায় পানকৌড়ি, ডাহুক, জলপিপি, শামুকখোল, সরালী, বালি হাঁস ইত্যাদি পাখির যাতায়াতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ধারণ করতে অনেককে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অধীর আগ্রহে বসে থাকতে হয়। প্রায়ই বিভিন্ন জাতের দুর্লভ ও বিরল পাখির ছবি ধারণ করতে ঘুরে বেড়াই সেখানে। জলময়ূরের দেখা পাওয়ার জন্য উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের রাণাদহ বিলের পাড়ে অপেক্ষায় ছিলাম।

তিনি আরও বলেন, টানা আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর অবশেষে ক্যামেরায় ধরা পড়ে কাঙ্ক্ষিত জলময়ূর। একটি উড়ছিল, আরেকটি মাখনা পাতায় বসে ডাকছিল। এক জোড়া আবার খুনসুটিতে মত্ত ছিল। এরা যখন জলপদ্ম, মাখনা বা শালুক পাতায় ভর করে হেঁটে বেড়ায় সেই দৃশ্য ধারণ করা যায় সহজে।

পাখিপ্রেমী কামাল হোসেন বলেন, রাণাদহ বিলে এখনো কিছু মাখনা উদ্ভিদ টিকে থাকায় কয়েকটি জলময়ূর বেঁচে আছে। কিন্তু শিগগির এ বিলকে সংরক্ষিত, শিকার ও দখলমুক্ত ঘোষণা না করলে একদিন হয়তো এ অপূর্ব পাখিটিও হারিয়ে যাবে।

প্রাণিবিদরা জানান, প্রজননকালে জলময়ূর অত্যন্ত সুন্দর হয়ে ওঠে। প্রজননকারী পাখির মাথা, গলা ও ডানার পালক সাদা থাকে। ঘাড় সোনালি-হলুদ, পিঠ গাঢ় বাদামি, বুক-পেট কালচে-বাদামি ও লেজ কালচে হয়। একটি কালচে-খয়েরি রেখা মাথা ও ঘাড়-গলার সাদা ও সোনালি-হলুদ রংকে পৃথক করেছে। ঠোঁট নীলচে হয়। চোখ বাদামি ও পা নীলাভ-কালো।

আরও জানা যায়, স্ত্রী-পুরুষ জলময়ূর দেখতে একই রকম। প্রজননকালে পুরুষ শাপলা ও পদ্মপাতা বা ভাসমান কোনো উদ্ভিদের পাতার ওপর বাসা বানায়। স্ত্রী এতে চারটি জলপাই-বাদামি চকচকে ডিম পাড়ে। পুরুষ একাই ডিমে ২৩ থেকে ২৬ দিন তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই হাঁটতে, সাঁতরাতে ও ডুব দিতে পারে। প্রায় দুই মাস পর্যন্ত বাবার তত্ত্বাবধানে থাকে।

বন বিভাগ ও পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, এক সময় পাহাড়ি জলাভূমি ছিল জলময়ূরের নিরাপদ আশ্রয়। তবে এখন অবৈধ শিকার, বাসস্থান ধ্বংস এবং জমিতে বিষ প্রয়োগের কারণে তাদের অস্তিত্ব চরম হুমকিতে।

স্থানীয় শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, দেওপাড়ার প্রাচীন রাণাদহ বিল একদা জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ছিল। বিলটির পাশেই কালীয়ান বিল ও গজারি বন। কিন্তু এখন বিলের বুক চিরে গেছে পাকা সড়ক, চলছে জবরদখল। এতে ব্যবহার হচ্ছে চায়না ও কারেন্ট জাল। ধ্বংস হচ্ছে মাছ, পাখি ও জলজপ্রাণী। ফলে বিলের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র চরম হুমকিতে পড়েছে। জলময়ূরের প্রজনন এবং বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ ও নির্দিষ্ট পরিবেশ প্রয়োজন। বসবাসের জায়গা সুরক্ষিত না হলে এরা হারিয়ে যাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চোখের নিচে কালো দাগ দূর হবে ৩ সবজিতে

ডিবি পরিচয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতেন তারা

হাসিনা টুপ করে ঢুকে পড়লে আম গাছে বেঁধে বিচার করবে মানুষ : আখতার

এক ইলিশ বিক্রি হলো ৮ হাজারে

ভারতীয় বংশোদ্ভূত মামদানির জয়ে মোদি-ভক্তরা ‘ক্ষুব্ধ’ কেন?

ইসলামি এনজিওগুলোকে সামাজিক ব্যবসায় আসার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

সবজি বাগানের আড়ালে গাঁজার চাষ

মেসিদের সামনে ইতিহাস গড়ার চ্যালেঞ্জ

সোমবার যেসব এলাকায় গ্যাস থাকবে না

ভিডিও ভাইরাল / রেস্ট হাউসে নারী নিয়ে ওসি, ছাত্রদলের হানা

১০

প্ররোচনায় না পড়ে নির্বাচন দিন : মুরাদ 

১১

জুলাই শহীদ আনাসের যে চিঠি পড়ে কেঁদেছে হাজারো মানুষ!

১২

আশিয়ান সিটির মাসব্যাপী আবাসন মেলা

১৩

বগুড়ায় নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা জয়পুরহাটে উদ্ধার

১৪

জলমহালের একমাত্র অধিকার প্রকৃত মৎস্যজীবীদের : উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

১৫

‘খতমে নবুওয়ত রক্ষায় আন্দোলনের বিকল্প নেই’

১৬

ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার আইডিয়া দিয়েছিলেন যিনি

১৭

প্রাথমিকের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক পাচ্ছেন ‘সুখবর’

১৮

ট্রেনের ধাক্কায় কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

১৯

আশুরায় যেভাবে পতন ঘটেছিল ফেরাউনের

২০
X