ইউটিউবে সিংহ ও বাঘের সংকর প্রজাতির ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ভেড়ার নতুন এক জাত উদ্ভাবন করেছেন মেহেরপুরের এক খামারি। গাড়ল ও দুম্বার সংকরায়ণের মাধ্যমে তৈরি এই প্রজাতির ওজন, আকৃতি এবং রোগ প্রতিরোধে দেশের প্রচলিত গাড়লের চেয়ে অনেক বেশি সক্ষম বলে দাবি তার।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোমরদা গ্রামের আসাদুজ্জামান আসাদ নামের এই তরুণ প্রবাস (মালয়েশিয়া) ফেরত। ২০২০ সালে দেশে ফিরে গরুর খামার দিয়ে শুরু করেন কৃষি উদ্যোগ। তবে গোখাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে সে খামার বেশি দিন চালানো সম্ভব হয়নি। পরে তিনি ছাগল ও গাড়ল পালনে মনোনিবেশ করেন। তুলনামূলক লাভ বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে গাড়লের দিকেই ঝুঁকে পড়েন।
২০২৪ সালের কোরবানির ঈদের আগে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে দুটি দুম্বা পাঁঠা সংগ্রহ করে স্ত্রী গাড়লের সঙ্গে একই পালে পালন শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই গর্ভধারণের পর জন্ম নেয় একটি নতুন ধরনের সংকর বাচ্চা। জন্মের পর থেকেই দেখা যায়, এই প্রজাতির বাচ্চাগুলো সাধারণ গাড়লের তুলনায় বড় আকারের এবং দ্রুত ওজন বাড়ে। নতুন প্রজাতির বাচ্চার লেজ তুলনামূলক ছোট হচ্ছে। সামনে থেকে দেখতে গাড়লের মতো লাগলেও কান এবং পেছনের দিকটা সম্পূর্ণ দুম্বার মতো।
আসাদের খামারে দেখা যায়, একটি সাধারণ গাড়লের ছয় মাস বয়সী বাচ্চা গড়ে ১২ থেকে ১৫ কেজি ওজনের হয়। সেখানে এই সংকর প্রজাতির ওজন ছয় মাসে পৌঁছে যাচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ কেজিতে। শুধু তাই নয়, এই প্রাণীগুলো বৃষ্টিতে ভিজেও সহজে অসুস্থ হচ্ছে না। জলাবদ্ধ এলাকায়ও স্বাভাবিকভাবে টিকে থাকতে পারছে।
খামারি আসাদ কালবেলাকে বলেন, এ পর্যন্ত ৪০টির মতো সংকর বাচ্চা বিক্রি করেছি। আমার খামারে এখন ৮০টি নারী গাড়লের সঙ্গে নিয়মিত সংকর প্রজনন চলছে। আমি বিশ্বাস করি, এই সংকর প্রজাতি দেশে নতুন এক শিল্প তৈরি করতে পারে।
গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কালবেলাকে, মাঠ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে এই সংকর ভেড়াগুলোর মাংস উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। তবে এ নিয়ে এখনো কোনো জাতীয় নীতিমালা নেই, সরকারিভাবেও কোনো গবেষণা শুরু হয়নি। এজন্য আমরা কোনো খামারিকে গাড়ল ও দুম্বার সংকরায়ণ করতে নিরুৎসাহিত করছি না।
জেলার পশুপালনকারীদের মতে, এ ধরনের সংকরায়ণ টেকসই হলে তা হতে পারে বাংলাদেশের মাংস উৎপাদন খাতে একটি নতুন দিগন্ত। তবে এর জন্য প্রয়োজন দ্রুত গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তা।
প্রায় ২০ বছর আগে দেশি ভেড়ার সঙ্গে কাশ্মীরি প্রজাতির ভেড়ার সংকরায়ণে যে জাতের উদ্ভব হয়েছিল সেটি গাড়ল নামে বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষে স্বীকৃতি পেয়েছে।
মন্তব্য করুন