নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কর্তৃপক্ষের আরোপিত প্রিপেইড মিটার ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন রাজশাহীর গ্রাহকরা। কেউ কেউ বলছেন, নিজেদের টাকায় কেনা পুরোনো মিটারের পরিবর্তে প্রিপেইড মিটার বসিয়ে এখন মাসে মাসে ভাড়া গুনতে হচ্ছে, যা অন্যায্য।
রাজশাহী নগরের দাসপুকুর এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ‘আমার পুরোনো মিটার তো আমি নিজেই কিনেছিলাম। হঠাৎ একদিন এসে ওরা নতুন মিটার বসিয়ে দিয়ে আগেরটা নিয়ে গেছে। এখন আবার ওই মিটারের জন্য মাসে ৪০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে। এটি অবিচার।’
এদিকে, একই এলাকার বাসিন্দা নাসির আলীর বাড়িতে এখনো প্রিপেইড মিটার বসানো হয়নি। ফলে, তার মাসিক বিদ্যুৎ বিলে কোনো ভাড়া যুক্ত হয় না।
মহানগরের শিরোইলের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম জানান, প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুৎ খরচ ঠিকমতো মাপা যাচ্ছে, এটা ভালো। কিন্তু ভাড়া কেন কাটা হচ্ছে, সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। বিদ্যুৎ কিনেই ব্যবহার করি, মিটারের জন্য আবার মাসে মাসে টাকা দিতে হবে এটা অবিচার। তা ছাড়া এসব মিটার তো আমার আগের টাকা দিয়ে কেনা মিটারের পরিবর্তেই দেওয়া হয়েছে। তাহলে ভাড়া দেব কেন?
নেসকো সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৭০ হাজার প্রিপেইড মিটার বসানো হয়েছে। প্রতি মাসে দুই ফেজ সংযোগের জন্য ৪০ টাকা এবং তিন ফেজ সংযোগের জন্য ২৫০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়। গড়ে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ প্রায় ২৭ কোটি টাকা আদায় করছে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের পরিচালক হাসিবুর রহমান বলেন, ‘প্রিপেইড মিটার বসানোর পুরো খরচ সরকার দিচ্ছে না। এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ রয়েছে। এ কারণে গ্রাহকদের কাছ থেকে নামমাত্র ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এটি সরকার নির্ধারিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি মিটারের মূল্য প্রায় ৬ হাজার টাকা। কেউ চাইলে এককালীন মূল্য পরিশোধ করে সেটি কিনে নিতে পারেন। আবার চাইলে ভাড়ার ভিত্তিতে নিতে পারেন। যারা ভাড়ায় নিয়েছেন, সেটি আমাদের দায়িত্বে থাকবে।’
তবে গ্রাহকের আগের মিটার ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কেউ চাইলে তার আগের মিটার ফেরত দেওয়া হবে।’
এদিকে রাজশাহীর নাগরিক সংগঠনগুলো প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘এই মিটারগুলো ত্রুটিপূর্ণ। একবার বন্ধ হয়ে গেলে ঠিক করতে আসে না। শুধু ভাড়া নয়, ভ্যাট-ট্যাক্সও কাটা হচ্ছে। এগুলো মানুষের ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, অনেক গ্রাহক মিটার পরিবর্তনের সময় আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তখন তাদের কথা শোনা হয়নি। আমরা দাবি জানাচ্ছি, আগের মিটারগুলো ফেরত দেওয়া হোক। নইলে আমরা আন্দোলনে যাব।
মন্তব্য করুন