পাবনার সাঁথিয়ায় এক মাদ্রাসাছাত্রকে হাত পা বেঁধে টেবিলের নিচে মাথা দিয়ে বেত ও স্কেল দিয়ে পিটিয়ে জখম করেছে ওই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক মাওলানা ইকবাল হোসাইন। বর্তমানে ওই ছাত্র আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাঁথিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা না করে এলাকায় বসে একটা বিচার করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি।
অভিযোগে জানা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার সময় উপজেলার হাড়িয়াকাহন বাইতুল উলুম নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার হেফজ শিক্ষার্থী আসাদুল (৮) জন্ডিস হওয়ার কারণে তিনদিন মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকায় মাদ্রাসার দুই ছাত্র সজীব ও সিয়ামকে দিয়ে বাড়ি থেকে ডেকে পাঠায় মাদ্রাসার ঐ শিক্ষক। আসাদুল ভেবেছিল সিয়াম টাকা পাবে এজন্য এসেছে । পরে আসাদুলের মা সোভা খাতুন ১০০ টাকা দিয়ে দেয় সিয়ামকে দেওয়ার জন্য। আসাদুল টাকা নিয়ে বাড়ির সামনে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সিয়ামকে দেওয়ার জন্য এগিয়ে গেলে সেখানে হুজুর ইকবাল হোসাইন পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় আসাদুলকে জিজ্ঞাসা করে সে কেন এতদিন মাদ্রাসায় অনুপস্থিত। আসাদুল অসুস্থের কথা জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে মাদ্রাসায় গিয়ে টেবিলের সঙ্গে দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে বেত এবং স্টিলের স্কেল দিয়ে আসাদুলকে মারপিট করে জখম করে এবং কাঁথা দিয়ে আসাদুলকে ঢেকে রাখে। কিছুক্ষণ পরে আসাদুলের ভাই খবর পেয়ে তার মাকে ঘটনা খুলে বললে তিনি মাদ্রাসায় যান। গিয়ে ছেলেকে খোঁজাখুঁজি করেন। না পেয়ে হুজুরকে ছেলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেশীক্ষক বলেন আসাদুল তো বাড়ি চলে গেছে। পরে তিনি এদিক ওদিক খোঁজাখুজি করে দেখেন যে মাদ্রাসার ভিতরে কাঁথা দিয়ে ঢাকা টেবিলের নিচে শুয়ে ছেলেটা কাতরাচ্ছে। তাকে উদ্ধার করে নিয়ে রাত ১টার দিকে সাঁথিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আসাদুলের মা শোভা খাতুন জানান, আমার ছেলের জন্ডিস ধরা পড়ায় মাদ্রাসায় যেতে পারেনি। আমি যদি ওই সময় দ্রুত না যেতাম তাহলে হয়তো আমার ছেলে মারা যেত। কোন মানুষ হয়ে এভাবে কোন শিশু সন্তানকে মারতে পারে? ওই হুজুরের মনে হয় কোন সন্তান নাই। থাকলে এভাবে অমানবিক নির্যাতন করত না।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আশারফ আলী ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা ওসমান গনির সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগোযোগের চেষ্টা করলে তাদেরকে পাওয়া যায় না। মাদ্রাসা কমিটির দুই সদস্য আরশেদ আলী ও আব্দুল মান্নান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ওই শিক্ষার্থীর যাবতীয় চিকিৎসার দায়ভার নেওয়া হয়েছে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারে মিমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শিশুটিকে যেদিন নিয়ে আসে সেদিন তার অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। এখন তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। তবে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জখম শুকাতেও সময় লাগবে।
মন্তব্য করুন