কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদের ওপারে মিয়ানমারে ফের গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। এরই মধ্যে বেশকিছু রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের প্রতিহত করে বিজিবি।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাত থেকে শুরু হয়ে শনিবার (২৩ আগস্ট) ভোর পর্যন্ত উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা।
অন্যদিকে, বঙ্গোপসাগর থেকে ফেরার পথে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে নৌকাসহ ১২ জেলে অপহরণের শিকার হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও ট্রলার মালিকদের অভিযোগ, মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সদস্যরা এর সঙ্গে জড়িত।
স্থানীয়রা বলছেন, হোয়াইক্যং সীমান্তের সীমান্তের ওপারে কুমিরখালী, শীলখালী ও সাইডং এলাকায় গোলাগুলি চলছিল।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা চৌধুরী লালু বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। ফলে সীমান্তের কাছাকাছি চিংড়ির প্রজেক্টে থাকা লোকজন ভয়ে পালিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ফের গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেল।’
টেকনাফ নয়াপাড়ার ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা জাফর বলেন, ‘রাখাইনে এখনো অমানবিক নির্যাতন বন্ধ হয়নি। ফলে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা বন্ধ হচ্ছে না। মূলত প্রাণে বাঁচতে তারা এপারে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। সীমান্তে বেশকিছু রোহিঙ্গা জড়ো হচ্ছে বলে আমারও জেনেছি স্বজনদের কাছ থেকে।’
বিজিবি বলছে, শুক্রবার ৬২ রোহিঙ্গাকে প্রতিহত করা হয়েছে। এখনো সীমান্তের ওপারে হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (২ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কিছু লোক সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা কাউকে ঢুকতে দিচ্ছি না। যেসব পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করছে, সেখানে আমরা টহল বৃদ্ধি করেছি।’
সীমান্তে গোলাগুলির বিষয়টি স্থানীয় মাধ্যমে জেনেছেন উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘সীমান্তে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্থল-জল পথে বিজিবি-কোস্টগার্ড শক্ত অবস্থানে রয়েছে।’
এ দিকে শনিবার দুপুরে টেকনাফের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে নৌকাসহ অপহরণের শিকার ১২ জেলে হলেন- মো. আলী আহমদ (৩৯), মোহাম্মদ আমিন (৩৪), ফজল করিম (৫২), কেফায়েত উল্লাহ (৪০), সাইফুল ইসলাম (২৩), সাদ্দাম হোসেন (৪০), মো. রাসেল (২৩), মো. সোয়াইব (২২), আরিফ উল্লাহ (৩৫), মোহাম্মদ মোস্তাক (৩৫) ও নুরুল আমিন (৪৫)। আরেকজনের নাম জানা যায়নি। তারা সবাই টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।
এ তথ্য নিশ্চিত করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘নৌকাসহ ১২ জেলে আটক হওয়ার বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে আমরা সবাই কাজ করছি, যাতে জেলেদের দ্রুত ফেরত আনা সক্ষম হয়।’
নৌকার মালিক সোলতান আহমেদ জানান, তার নৌকার ১২ জেলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর থেকে আবার ঘাটের উদ্দেশে রওনা করে। এ সময় আরাকান আর্মির সদস্যরা তাদের ধরে নিয়ে যায়।
বিজিবি বলছে, গত আট মাসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে অন্তত ২৩০ জেলেকে অপহরণ করে আরাকান আর্মি। এর মধ্যে শুধু জানুয়ারি থেকে মে মাসেই ১৫১ জন। তবে কয়েক দফায় প্রায় ২০০ জনকে ফেরত এনেছে বিজিবি।
মন্তব্য করুন