চট্টগ্রাম নগরীর দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়নে গতি নেই। জলাবদ্ধতা, যানজট, স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং মানসিক চাপ এগুলো শহরের চলমান সমস্যার প্রতিফলন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, অদূর ভবিষ্যতে শহরটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে নগরের একটি হোটেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজিত ‘অপরিকল্পিত নগরায়ণ চট্টগ্রাম’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সভায় স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, চট্টগ্রামের জন্য ১৯৬১, ১৯৬৫-১৯৮৬, ১৯৯৫-২০১৫ এবং ২০০৮ সালে একাধিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হয়েছে। কিন্তু কোনো সংস্থা সেগুলো অনুসরণ করেনি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) উভয় সংস্থারই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সীমিত, পেশাদার দক্ষতার অভাব রয়েছে। ফলে নগরের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো প্রায়শই পরিকল্পনা ছাড়া বাস্তবায়িত হচ্ছে।
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রাশেদুল হাসান বলেন, সল্টগোলা মার্কেট ও কর্ণফুলী অঞ্চলে পরিকল্পনা মেনে উন্নয়ন হয়নি। আবাসিক এলাকা ও হাসপাতাল ছাড়া অন্য ভবনগুলো কোড লঙ্ঘন করে নির্মিত। বিপ্লব উদ্যান ক্ষতিগ্রস্ত, হাঁটার স্থান নেই, শব্দদূষণে শিশুরা ক্ষুব্ধ। যানজটে হাসপাতালে পৌঁছানো কঠিন। সব মিলিয়ে শহরের জীবনযাত্রা প্রভাবিত হচ্ছে।
সভায় বক্তারা সিডিএ চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিমের অনুপস্থিতি বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, নগর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে শীর্ষ পর্যায়ের সমন্বয় অপরিহার্য। তারা মনে করেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আলোচনায় উপস্থিত না হলে সমস্যা সমাধান কঠিন।
সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী স্বপন কুমার বড়ুয়া, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকিয়া মুমতাহিনা, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাবরিনা সুলতানা, চুয়েটের সিভিল ও অ্যানভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আসিফুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিসার্চ ল্যাবের সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়া, ফোরাম ফর প্ল্যানড চট্টগ্রামের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুবাস বড়ুয়া এবং বেলার প্রোগ্রাম ও ফিল্ড কোঅর্ডিনেটর এএমএম মামুন বক্তব্য দেন।
মণিরা পারভীন রুবার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডা. শাইক হায়দার। চট্টগ্রামের বিভিন্ন পরিবেশ ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীরাও অংশ নেন।
অংশগ্রহণকারীরা জানান, সভায় চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন উপস্থিত না থাকলেও তিনি নগরের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছেন।
মন্তব্য করুন