নাটোর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪৭ জন হঠাৎ পেটের অসুখে অসুস্থ হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ৬৬ জন, মহিলা ৫৫ জন এবং শিশু ২৬ জন। এ ঘটনায় হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডকে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য নির্ধারণ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, পৌরসভার সরবরাহ লাইনের পানি পানের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ডায়রিয়া, পেট ব্যথা ও বমি নিয়ে পৌরসভার একটি ওয়ার্ডের প্রায় দেড়শত রোগী হাসপাতালে ভর্তির ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। এদিকে ঘটনার কারণ জানতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়। ঘটনা তদন্তে আইসিডিডিআরবির একটি প্রতিনিধি দল নাটোরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর নাটোর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাউতলা এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ির প্রায় ৩০ জন বাসিন্দার কেউ কেউ হঠাৎ ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা ও বমি ভাব অনুভব করেন। প্রাথমিক অবস্থায় তারা স্যালাইন, পেট ব্যথা কমানোর সহজপ্রাপ্য ওষুধসহ বেশ কয়েক ধরনের ওষুধ সেবন করেন। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় মধ্যরাত থেকে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হতে শুরু করেন। এরপর সকাল থেকে একই ওয়ার্ডের কাঁঠালবাড়ি, ঘোড়াগাছা ও ডোমপাড়া এলাকার শতাধিক মানুষ একই সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, মঙ্গলবার বিকেলের পর পৌরসভার সরবরাহ পানি পানের পর তারা হঠাৎ পেটে ব্যথা অনুভব করেন। তারপর থেকেই ডায়রিয়া, শরীরের রগ ও পেশিতে টানসহ বিভিন্ন সমস্যা অনুভব করতে থাকেন।
আমেনা খাতুন নামের এক রোগীর স্বজন জানান, তিনি বাবা ও ভাইকে হাসপাতালে এনেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে দুজনই পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করছিলেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করা অবস্থায় তাদের হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়েছে।
রবিউল ইসলাম নামের এক রোগী বলেন, বিকেল থেকে শরীর দুর্বল লাগছিল। সন্ধ্যায় পানি পানের পর পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া শুরু হয়। অবস্থা ভালো না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
সোহাগ শিকদার নামের ঝাউতলা এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে পানি পানের পর আমার পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ও শরীরের বিভিন্ন রগ ও পেশিতে টান ধরতেছে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছি।
পৌরসভার ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা মণি বেগম বলেন, বেশ কিছুদিন হল পৌরসভার পানি আসে ঘোলা ও ময়লাযুক্ত। আমাদের অন্য কোনো উপায় নেই তাই বাধ্য হয়েই এ পানি খেতে হয়।
নাটোর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হক বলেন, পৌরসভার সরবরাহ করা পানি একই ধরনের কয়েকটি ট্যাংক থেকে ৯টি ওয়ার্ডের সকল এলাকায় সরবরাহ করা হয়। তবে ঘটনা ঘটেছে মাত্র একটি ওয়ার্ডের কিছু এলাকায়। ওই এলাকার সরবরাহ লাইনে কোনো ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে কি না তা খতিয়ে দেখতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে আমরা বলেছি। তাদের পরামর্শে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পৌর কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে জনগণের সমস্যা সমাধানে কাজ করবে।
নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, পানিবাহিত কারণই শুধু নয়, গত তিন দিনের টানা গরমে ডিহাইড্রেশনের কারণেও এমন বিপর্যয় ঘটে থাকতে পারে। আমরা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি বাতিল করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি রোগীদের সুস্থ করতে।
নাটোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুক্তাদির আরেফিন বলন, ঠিক কি কারণে এতগুলো মানুষ এক সঙ্গে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন, তা আমরা এখনো নিশ্চিত না। তবে সবারই পানিবাহিত রোগের উপসর্গ আছে।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিশ্চিতে আমরা আইসিডিডিআরবির সহায়তা চেয়েছি। তাদের একটি দল নাটোরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তারা পানি পরীক্ষা করে কারণ জানাবে।
ডা. মুক্তাদির আরেফিন বলেন, পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে আমরা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করব। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত স্যালাইন, ওষুধ মজুত আছে। কোনো সংকট হবে না। সবাইকে আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ করছি।
নাটোর জেলা প্রশাসক আসামা শাহীন বলেন, আমি রোগীদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছি। পানি থেকে সবার পেটের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করছি। ইতোমধ্যে পানির নমুনা বগুড়ার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। স্যালাইনসহ পর্যাপ্ত উপকরণ মজুত আছে। রোগীদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
মন্তব্য করুন