দরবার শরিফ নিয়ে বির্তকের জেরে সংঘঠিত সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ। তুমুল এ সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় নুরাল পাগলার আস্তানায় আগুন দেওয়ার পাশাপাশি ভাঙচুর চালিয়েছে উত্তেজিত জনতা। এ সময় কবর থেকে নুরাল পাগলার লাশ উঠিয়ে মহাসড়কে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুর থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করে সেনাবাহিনী, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
স্থানীয়রা প্রথমে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং পরে এ হামলা চালায়। উচ্চস্থানে কবর তৈরি ও কথিত অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে তারা এ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বলে জানা গেছে।
গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নুরাল পাগলের মৃত্যুর পর তাকে কবর দেওয়া হয় মাটি থেকে ১২ ফুট উুঁচুতে। কাবা শরিফের আদলে তৈরি করা হয় কবর। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল জেলাজুড়ে, ফুঁসে উঠেছিল উত্তেজিত জনতা। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুমার পর বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা।
বিক্ষোভ থেকে হামলা চালানো হয় নুরাল পাগলের দরবার শরিফে। পাল্টা আক্রমণ করেন নুরাল পাগলের ভক্তরা। তুমুল সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন। পরে নুরাল পাগলের দরবার শরিফে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয় তৌহিদি জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র কালবেলাকে জানায়, আজ গোয়ালন্দে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোট আঘাতের সংখ্যা ২২ জন, গুরুতর আহত ২ জন, হাসপাতালে ভর্তি ৪ জন এবং আমাদের কেন্দ্রে এখনো কোনো মৃতদেহের খবর পাওয়া যায়নি।
ধর্মীয় অনুশাসন বিকৃত করা ও নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবি করার অভিযোগে নুরাল পাগলের প্রতি ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে ক্ষোভ ছিল। বিশেষ করে, তার কবর মাটি থেকে বেশ কয়েক ফুট উঁচুতে বেদী করে তৈরি করাকে ‘শরিয়ত পরিপন্থি’ দাবি করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ ওঠে।
এ বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয় আলেম সমাজ এবং বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবারের মধ্যে কবর নিচু না করলে শুক্রবার বিক্ষোভে নামার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল।
তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর স্থানীয় মুসল্লিরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এবং গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে একটি সমাবেশও করেন। এরপর, তারা নুরাল পাগলার আস্তানায় হামলা চালিয়ে কবর ও অন্যান্য স্থাপনা ভাঙচুর এবং আগুন ধরিয়ে দেন। কবর থেকে নুরাল পাগলের লাশ উঠিয়ে মহাসড়কে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এর আগে শুক্রবার সকালে গোয়ালন্দ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নুরাল পাগলের পরিবার ও ভক্তরা। সংবাদ সম্মেলনে গোয়ালন্দ পাক দরবার শরিফকে নিয়ে অপ্রচার করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন। এরপরই তৌহিদি জনতা আরও ফুঁসে ওঠেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শরিফুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, এ ঘটনায় হাসপাতালে কোনো মৃত্যু রোগীর খবর নেই। হাসপাতাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২২ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুল রহমান কালবেলাকে বলেন, এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আমার গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ও থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করেছে জনতা। পরে নুরাল পাগলের আস্তানায় হামলা চালিয়েছে। তার মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তবে সঠিক সংখ্যা এখনো বলতে পারব না। পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
উল্লেখ্য, আশির দশকে নুরাল পাগল নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন দরবার শরিফ। তিনি নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মন্তব্য করুন