একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদনের টাকাসহ বিদ্যালয়ের লক্ষাধিক টাকা নিয়ে উধাও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কলেজ শাখার অফিস সহকারী কৌশিক পাল। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি আবেদনের নামে টাকা নিলেও তা জমা দেননি তিনি। এতে এই বিদ্যালয়ের ৩৩ শিক্ষার্থীর ভর্তি অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, অফিস সহকারী কৌশিক পাল দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। তিনি জুয়ায় হেরে তাহিরপুর বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে লাখ লাখ টাকা ধারদেনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে অনেকেই টাকার জন্য তাকে খোঁজাখুঁজি করে। অবশেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তি টাকা নিয়ে আবেদন না করার বিষয়টি ফাঁস হলে তিনি গা-ঢাকা দেন।
তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালে এসএসসি ফল প্রকাশের পর কৃতকার্যদের মধ্যে অনেকেই একই কলেজ শাখার জন্য ভর্তি আবেদন করে। সে সময় কলেজ শাখার অফিস সহকারী কৌশিক পাল ৩৩ জন শিক্ষার্থীদের ভর্তি আবেদনসহ ভর্তি হওয়ার সকল দায়দায়িত্ব নেন। এবং তাদের ভর্তি নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না বলেও তাদের শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করেন। তার কথা মতে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে অপেক্ষা করে। ৩০ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ভর্তি আবেদন শুরু হয় প্রথম ধাপের। ২৩ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট দ্বিতীয় ধাপের আবেদনও শুরু হয়। ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর তৃতীয় ধাপের আবেদন শুরু হয়ে শেষ হলেও কোনো শিক্ষার্থীর মোবাইলে ভর্তি আবেদন সংক্রান্ত মেসেজ আসেনি। বিষয়টি শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষককে অবহিত করে।
প্রধান শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেন। ৭ সেপ্টেম্বর থেকে তৃতীয় ধাপের ভর্তি শুরু হয় কিন্তু ভর্তি জন্য তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে কোনো চিঠি না আসায় প্রধান শিক্ষক বোর্ডে যোগাযোগ করেন। সেখানে গিয়ে জানেন ভর্তি নিশ্চয়ন নয় তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ শাখায় ৩৩ শিক্ষার্থীর ভর্তির জন্য কোনো আবেদনই করা হয়নি। ফলে ২০২৫-২৬ সালে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতকার্য হওয়া ৩৩ শিক্ষার্থীর।
অপরদিকে গত ১৫ দিন ধরে শিক্ষার্থীদের ভর্তি আবেদনের টাকাসহ কলেজ শাখার বিভিন্ন ফান্ডের লক্ষাধিক টাকা নিয়ে উধাও রয়েছেন অফিস সহকারী কৌশিক পাল।
তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কলেজ শাখায় ভর্তিচ্ছুক মোর্শেদা আক্তার আলো, তাসমিয়া আক্তার তৃণা জানান, আমাদের রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার পর কৌশিক পাল আমাদের সবার আবেদনের দায়িত্ব নেন। ভর্তি আবেদনের জন্য তিনি প্রত্যেকের কাছ থেকে ৭৫০ টাকা করে জমা নেন। কিন্তু তিনি আমাদের কারো কোনো আবেদনের নিশ্চয়ন করেননি বরং আবেদন করেছেন কি না সেটাই সন্দেহ।
ভর্তি আবেদনের বিষয়টি ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ শাখার অফিস সহকারী কৌশিক পাল। ভর্তি আবেদনের টাকাসহ কলেজ ফান্ডের অন্যান্য টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি, ফোনটি কেটে দেন।
তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মাজাহারুল ইসলাম বলেন, বিগত বছরও অফিস সহকারী কৌশিক পাল অনেক শিক্ষার্থীর আবেদন করে দিয়েছেন। এবারে আমি নতুন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছি। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়ে কৌশিক পালকে জিজ্ঞেস করলে সে বলত বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমি কাজ সম্পন্ন করে রেখেছি। সম্প্রতি কলেজে কোনো ভর্তিসংক্রান্ত চিঠি না আসায় আমি সিলেট বোর্ডে গিয়ে খোঁজ নেই। সেখানে জানতে পারি ৩৩ শিক্ষার্থী নামে কোনো আবেদনই করা হয়নি।
এ ছাড়া বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সোনালি সেবার ১৮ হাজার টাকাসহ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে না। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এলাকায় তার কাছে আরও অনেকেই টাকা পায় এবং সে এলাকা ছেড়ে উধাও।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও তাহিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি মেহেদী হাসান মানিক বলেন, আমি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী কৌশিক পালকে ডেকে আনা হয়। কৌশিল পাল একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করবে অঙ্গীকার করে গেছে। যদি সে ব্যর্থ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন