কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল এখন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদ্বোধনের দুই বছরের মাথায় এ বিলের পরিমাণ সাড়ে ৭ লাখ টাকার ওপরে পৌঁছেছে। আয় না থাকায় ঋণের বোঝা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বুড়িচং উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে মডেল মসজিদের কার্যক্রম শুরু হয়। মসজিদে আজান, নামাজ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন পেশ ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন এবং দুজন খাদেম নিয়োগপ্রাপ্ত। তবে শুধু তাদের সম্মানীই ইসলামিক ফাউন্ডেশন বহন করে, মসজিদের অন্যান্য খরচ যেমন পরিচ্ছন্নতা, বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য পরিচালন ব্যয়, নামাজরত মুসল্লি ও মিলনায়তন ভাড়া থেকে অর্জিত দানের অর্থ দিয়ে চালাতে হয়।
মডেল মসজিদে রয়েছে একাধিক নামাজের কক্ষ, দামি ঝাড়বাতি, শত শত লাইট, ফ্যান ও এসি, নারী-পুরুষের পৃথক অজু ও নামাজের স্থান, পাঠাগার, গবেষণাকেন্দ্র, হজযাত্রী নিবন্ধন, পর্যটকদের আবাসন ব্যবস্থা, দাওয়াতি কার্যক্রম, হিফজ মাদ্রাসা, মক্তব, মৃত ব্যক্তির গোসলের ব্যবস্থা এবং ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসন প্রকল্প। এত বিস্তৃতি কমপ্লেক্স পরিচালনার ব্যয় সামলানো দানের অর্থ দিয়ে সম্ভব নয়।
ফিল্ড সুপারভাইজার মো. হাবিবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত মডেল মসজিদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৭৫২ টাকা। প্রতি মাসে গড়ে ২৫-৩০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে, কিন্তু মুসল্লিদের দান থেকে প্রতি মাসে আয় হয় মাত্র প্রায় ৮ হাজার টাকা। মসজিদটি উপজেলা সদরের তুলনায় দূরে হওয়ায় দানের পরিমাণও কম। ফলে প্রতি মাসে বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার যদি বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না করে, তবে এত বড় ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। বর্তমানে বিদ্যুৎ বিভাগের চাপ সামলাতে হচ্ছে মসজিদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের। এই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে মসজিদের কার্যক্রমে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২-এর বুড়িচং জোনাল অফিসের ডিজিএম মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, মডেল মসজিদের বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জেলা পর্যায়ে কথা বলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়নি। দিন দিন বকেয়া বিলের পরিমাণ আরও বাড়ছে।
এ বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হোসেন বলেন, মডেল মসজিদটি উপজেলা সদর থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় জনসমাগম কম হচ্ছে। এর ফলে মুসল্লিদের দানের টাকার পরিমাণও অনেক কম। তাই প্রতি মাসেই বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থেকে যাচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি মাসে ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের সিদ্ধান্ত হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। মসজিদের আয় বৃদ্ধি ও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
মন্তব্য করুন