কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মায়ের মৃত্যুর পর ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দি লিটন

মায়ের মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন লিটন বেপারি। এরপর থেকে পায়ে শিকল পরানো অবস্থায় দিন কাটে তার। ছবি : কালবেলা
মায়ের মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন লিটন বেপারি। এরপর থেকে পায়ে শিকল পরানো অবস্থায় দিন কাটে তার। ছবি : কালবেলা

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর গ্রামে এক মর্মান্তিক দৃশ্য—২৫ বছরের লিটন বেপারি নামের এক যুবক টানা ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। মায়ের মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারানো লিটনের জীবন আজ মানবেতর।

২০১৫ সালে মা ফুলমালা বেগমের মৃত্যুর পর থেকেই বদলে যায় শান্ত-শিষ্ট এই তরুণ। প্রথমে সামান্য অস্বাভাবিক আচরণ, পরে পুরোপুরি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। কখনো নিজেকে আঘাত করার চেষ্টা, কখনো আবার হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে আশপাশের মানুষকে আক্রমণের ঝুঁকি—সব মিলিয়ে পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। শেষপর্যন্ত নিরাপত্তার স্বার্থেই তাকে বাড়ির পাশের একটি গাছে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয় স্বজনরা।

বছরের পর বছর ধরে সেই গাছের নিচেই তার আশ্রয়। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কিংবা শীত—সবই সহ্য করে বেঁচে আছেন লিটন। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ সহানুভূতিশীল হয়ে খাবার দেন, তবে মূলত বড় বোন তানজিলা বেগমই তার একমাত্র ভরসা।

আবেগঘন কণ্ঠে তানজিলা বলেন, ‘ভাইটা ছোটবেলা থেকেই শান্ত-শিষ্ট ছিল, মায়ের প্রতি ছিল অগাধ ভালোবাসা। মাকে হারানোর পর থেকে আর আগের মতো নেই। আমরা গরিব মানুষ, দিনে আনি দিনে খাই। চিকিৎসার খরচ বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই। হয়ত সুচিকিৎসা পেলে সে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারত।’

জানা গেছে, লিটনের বাবা ফয়জল বেপারি অনেক আগেই মারা গেছেন। ফলে সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে বড় বোন তানজিলার ওপর। তার স্বামীর সামান্য আয় দিয়েই চলে পরিবার। এ অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন ভাইয়ের চিকিৎসা করানো তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হলে স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে। কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কায়সার আহাম্মেদ বলেন, ‘পরিবার থেকে লিখিত আবেদন পেয়েছি। উপজেলা প্রশাসন লিটনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। শিকলবন্দী অবস্থায় এভাবে একজন মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’

এলাকাবাসীর মতে, সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো একসঙ্গে এগিয়ে এলে লিটনের চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব। এতে শুধু একটি তরুণের জীবনই নয়, এক পুরো পরিবারও বাঁচতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যে ৭ খাবার ২৪ ঘণ্টার বেশি ফ্রিজে রাখলেই হয়ে উঠতে পারে বিষ

সাইপ্রাসকে হুমকি দিল তুরস্ক

প্রতারণার মামলা / স্ত্রীসহ ইভ্যালির রাসেলের তিন বছরের কারাদণ্ড

পুকুরে ডুবে যাচ্ছিল নাতি, বাঁচাতে গিয়ে দাদারও মৃত্যু

আগামী বছরের বইমেলার সময় পরিবর্তন

জবিতে প্রথমবারের মতো উদ্যোক্তা মেলা

রাকসু নির্বাচনেও প্রার্থী এক দম্পতি, দৃষ্টি কাড়ছে সবার 

রাজনৈতিক সরকার না আসা পর্যন্ত অস্থিতিশীলতা কাটবে না : আমীর খসরু

অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিতে হবে : খেলাফত মজলিস

‘হ্যান্ডি ও ধাবা’ রেস্টুরেন্টকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা

১০

পিআর পদ্ধতি নিয়ে ‘গণভোট’ দাবি ইসলামী আন্দোলনের

১১

স্ত্রী আসলেই নারী কি না প্রমাণ দেবেন ম্যাখোঁ

১২

অভিজ্ঞতা ছাড়াই চাকরি দিচ্ছে ইবনে সিনা, পাবেন একাধিক সুবিধা

১৩

হস্তান্তরের আগেই স্কুলের নবনির্মিত ভবনে ফাটল

১৪

আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে দুঃসংবাদ দিল ফিফা

১৫

চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় জানালেন ইসি সচিব

১৬

জেসিআই ঢাকা সাউথের উদ্যোগে রাইজআপ টাইগ্রেস স্কলারশিপ প্রকল্পের উদ্বোধন

১৭

মহাসড়কে গাছ ফেলে বিক্ষোভ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৮

সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন

১৯

গাজায় রুয়ান্ডার ছায়া, কী হতে চলেছে

২০
X