শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২
কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মায়ের মৃত্যুর পর ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দি লিটন

মায়ের মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন লিটন বেপারি। এরপর থেকে পায়ে শিকল পরানো অবস্থায় দিন কাটে তার। ছবি : কালবেলা
মায়ের মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন লিটন বেপারি। এরপর থেকে পায়ে শিকল পরানো অবস্থায় দিন কাটে তার। ছবি : কালবেলা

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর গ্রামে এক মর্মান্তিক দৃশ্য—২৫ বছরের লিটন বেপারি নামের এক যুবক টানা ১৪ বছর ধরে শিকলবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। মায়ের মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারানো লিটনের জীবন আজ মানবেতর।

২০১৫ সালে মা ফুলমালা বেগমের মৃত্যুর পর থেকেই বদলে যায় শান্ত-শিষ্ট এই তরুণ। প্রথমে সামান্য অস্বাভাবিক আচরণ, পরে পুরোপুরি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। কখনো নিজেকে আঘাত করার চেষ্টা, কখনো আবার হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে আশপাশের মানুষকে আক্রমণের ঝুঁকি—সব মিলিয়ে পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। শেষপর্যন্ত নিরাপত্তার স্বার্থেই তাকে বাড়ির পাশের একটি গাছে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয় স্বজনরা।

বছরের পর বছর ধরে সেই গাছের নিচেই তার আশ্রয়। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কিংবা শীত—সবই সহ্য করে বেঁচে আছেন লিটন। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ সহানুভূতিশীল হয়ে খাবার দেন, তবে মূলত বড় বোন তানজিলা বেগমই তার একমাত্র ভরসা।

আবেগঘন কণ্ঠে তানজিলা বলেন, ‘ভাইটা ছোটবেলা থেকেই শান্ত-শিষ্ট ছিল, মায়ের প্রতি ছিল অগাধ ভালোবাসা। মাকে হারানোর পর থেকে আর আগের মতো নেই। আমরা গরিব মানুষ, দিনে আনি দিনে খাই। চিকিৎসার খরচ বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই। হয়ত সুচিকিৎসা পেলে সে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারত।’

জানা গেছে, লিটনের বাবা ফয়জল বেপারি অনেক আগেই মারা গেছেন। ফলে সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে বড় বোন তানজিলার ওপর। তার স্বামীর সামান্য আয় দিয়েই চলে পরিবার। এ অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন ভাইয়ের চিকিৎসা করানো তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হলে স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে। কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কায়সার আহাম্মেদ বলেন, ‘পরিবার থেকে লিখিত আবেদন পেয়েছি। উপজেলা প্রশাসন লিটনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। শিকলবন্দী অবস্থায় এভাবে একজন মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’

এলাকাবাসীর মতে, সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো একসঙ্গে এগিয়ে এলে লিটনের চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব। এতে শুধু একটি তরুণের জীবনই নয়, এক পুরো পরিবারও বাঁচতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় সংক্রান্ত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ

মির্জা ফখরুলকে ফোন করে আলোচনার আহ্বান জামায়াতে ইসলামীর

আইডিইবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও গণপ্রকৌশল দিবসের সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা

মারা গেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী

চার দশক পর মার্কিন কংগ্রেস থেকে অবসর নিলেন ন্যান্সি পেলোসি

মাদক ও চাঁদাবাজমুক্ত ঢাকা-১১ গড়ার অঙ্গীকার ড. কাইয়ুমের

গাজায় আরও ফিলিস্তিনি নিহত, লেবাননেও ইসরায়েলি হামলা

ক্রান্তিকালীন একমাত্র বিএনপিই দেশের হাল ধরেছে : মোস্তফা জামান

জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট করতে হবে : জামায়াত আমির

একই বিদ্যালের ৮ শিক্ষার্থীর হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, হাসপাতালে ভর্তি

১০

ঢাকা-১২ আসনে আনোয়ারুজ্জামানকে ধানের শীষে মনোনীত করতে মিছিল

১১

স্থগিত হওয়া পদ ফিরে পেলেন বিএনপি নেতা কচি

১২

ঘাটাইলে বিএনপির ওবায়দুল হক নাসিরের মনোনয়ন পরিবর্তন দাবি

১৩

১৯৩ নন-ক্যাডারকে সহকারী সমাজসেবা পদে নিয়োগের নির্দেশ

১৪

‘জরুরি প্রয়োজন’ ছাড়া চিকিৎসকদের বদলি-পদায়ন বন্ধ

১৫

মধ্যপ্রাচ্যের এক দেশে সিরিজ হামলা ইসরায়েলের

১৬

সনাতন ধর্মাবলম্বী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঁচ শতাধিক পরিবারের বিএনপিতে যোগ

১৭

রংপুরের দুই কোটি মানুষ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন আন্দোলনে যুক্ত : দুলু

১৮

গণভোট ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না : আতাউর রহমান

১৯

এক দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রাম নগরীতে আবারও গুলি, আহত রিকশাচালক

২০
X