কিশোরগঞ্জকে ঢাকা বিভাগ থেকে সরিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্র-জনতা। শহীদ মিনার চত্বর থেকে শুরু করে অনলাইন ও অফলাইন সব জায়গায় আজ একটাই স্লোগান ধ্বনিত হচ্ছে—কিশোরগঞ্জ আমাদের গর্ব, আমরা ঢাকা বিভাগেই থাকব!
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে কিশোরগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে শত শত ছাত্র, তরুণ, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন।
শুরুতে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে কর্মসূচি পালন হলেও অল্প সময়েই ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের। বিক্ষোভে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। পাশাপাশি বিএনপি, ছাত্রদল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও।
বিক্ষোভে বক্তারা বলেন, কিশোরগঞ্জকে ময়মনসিংহ বিভাগে নেওয়ার প্রস্তাব জেলার জনগণের মতামতের পরিপন্থি। এটি প্রশাসনিক ছলে জেলার মর্যাদা খর্ব করার অপচেষ্টা। ২০১৫ সালেও একই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন কিশোরগঞ্জবাসীর কঠোর আন্দোলনের মুখে সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এখন আবার একই ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার যদি জনগণের মতামত অগ্রাহ্য করে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা করে, তাহলে জেলার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির করে দেবে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা বলেন, কিশোরগঞ্জের মর্যাদা ও ইতিহাস রক্ষায় আমরা দলমত নির্বিশেষে এক হবো। প্রয়োজনে সড়ক অবরোধ, হরতাল এবং মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি চলবে।
তারা বলেন, সরকারের উচিত হবে দ্রুত এ প্রস্তাব প্রত্যাহার করে কিশোরগঞ্জের জনগণের কাছে জবাব দেওয়া। আমাদের জেলা প্রশাসনিকভাবে নয়, হৃদয়ে ঢাকারই অংশ। এ পরিচয় বদলাতে চাই না, বদলাতে দেব না। ময়মনসিংহে ফেরানোর চেষ্টা শুধু প্রশাসনিক ভুল নয়, এটি মানুষের অনুভূতিতে আঘাত।
ইতিহাস বলছে, ১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জ প্রথম বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার একটি মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৮৪ সালে কিশোরগঞ্জকে পৃথক করে স্বাধীন জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম—সব দিক থেকেই কিশোরগঞ্জ ঢাকার সঙ্গে বেশি যুক্ত।
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ১১০ কিলোমিটার হলেও কিশোরগঞ্জের প্রশাসনিক সংযুক্তি ঢাকার সঙ্গেই অধিক যুক্তিযুক্ত।
বিক্ষোভ মিছিলে, জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক মো. জগলুল হাসান চয়নের পরিচালনায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিলু ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শহীদুল্লাহ কায়সার শহীদ।
এ ছাড়া জেলা ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি মারুফ আল মোস্তফা, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রাজীব, রাফিউল ইসলাম নৌশাদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স, গুরুদয়াল কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহ আলম, সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান জেনি, কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি নুসরাত জাহান বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন