নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
দেশের জনগণ পিআরের পক্ষে ভোট দিলে বিএনপিকে তা মানতে হবে দাবি করে তিনি বলেন, আমরা বলছি- অধিকাংশ মানুষ পিআর চায় কিনা তা গণভোটে মতামত গ্রহণ করুন। আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কথা দিচ্ছি, অধিকাংশ জনগণ যদি পিআরের পক্ষে ভোট দেয়, আপনাদেরও মানতে হবে।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রংপুরে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৫ দফা দাবিতে রংপুর জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন। রংপুর মহানগর ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে দুপুর আড়াইটার দিকে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে এ সমাবেশ শুরু হয়।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে মানুষ ভোট দেবে না, দলকে ভোট দেবে। দলের আদর্শ ও ইশতেহার দেখে জনগণ যে দলকে পছন্দ করবে সেই দলকে আগে ভোট দেবে। এর মাধ্যমে ছোট-বড় সব দলের প্রতিনিধিত্ব সংসদে হবে। জনগণের অংশীদারিত্বে একটি অংশীদারিত্ব সংসদ হবে। এতে দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে কোনো দল সংসদে গিয়ে নতুন ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে পারবে না।
পিআর প্রশ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংবিধান দেখাচ্ছেন অভিযোগ করে মিয়া গোলাম পারওয়ার বলেন, সংবিধান আমাদের কাছে বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা। সাহস থাকলে গণভোট দেন। জনগণের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা রাখি। মনে রাখবেন, গায়ের জোরে দেশ শাসন করার দিন শেষ হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন না করে যদি বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোতে আবার নির্বাচন হয়, আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে, আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। বাংলার মানুষ তা হতে দেবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি পিআর মানতে চায় না। প্রধানমন্ত্রী টানা ১০ বছরের বেশি থাকতে পারবে না- এই মত তারা মানতে চান না। সাংবিধানিক পদগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছামাফিক নিয়োগ বাদ দিতে আলাদা নিয়োগ কর্তৃপক্ষ হবে, সব জায়গায় এটা তারা মানতে চান না। এইসব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তারা আপত্তি করছেন। পিআর তারা এই জন্য মানতে চান না, কারণ যখন দলকে নির্বাচিত করা হয় তখন ব্যক্তির কোনো স্বার্থ থাকে না। এতে কোনো ব্যক্তি কালোটাকা, মাস্তানি, পেশিশক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে কারচুপি করতে কেন যাবে।
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদকে যারা টিকিয়ে রেখেছিল ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি- এরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে না থাকলে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সুযোগ পেত না। নির্বাচনের বৈধতা পেত না। আওয়ামী লীগ যে অপরাধে অপরাধী, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলসহ ইনু-মেননরা সেই একই অপরাধে অপরাধী। আমরা তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমকে স্থগিত করতে বলেছি।
গোলাম পরওয়ার বলেন, অনেকেই বলছেন আপনারা তো ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়ে যাচ্ছেন, আলোচনা তো শেষ হয়নি কিন্তু রাজপথে গেলেন কেন। চলে গেলাম কেন বোঝেন না। আপনি একটা জুলাই সনদও ডিক্লারেশন করবেন- গোপনে ড্রাফট দিয়ে দেবেন বিএনপির কাছে। এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে না। এগুলো যাতে না করেন আমরা এখনো আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি। আমরা নিরাশ নই, আমরা আলোচনায় যাব। জনমত যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেন। যেহেতু কারও দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন ও যেহেতু রাজনৈতিক শক্তির কাছে মাথা নত করছেন- সে কারণে আমরা আন্দোলনে এসেছি।
রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা এটিএম আজম খানের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, মাহবুবার রহমান বেলাল, রংপুর জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী প্রমুখ। পরে ৫ দফা দাবিতে পাবলিক লাইব্রেরি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে রংপুর নগরীর শাপলা চত্বরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়।
মন্তব্য করুন