কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
হিন্দু নেতাদের অভিমত

গণতন্ত্রের চর্চা থাকলে সাম্প্রদায়িকতা থাকতো না

জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আসন্ন দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় হিন্দু নেতারা। ছবি : কালবেলা
জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আসন্ন দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় হিন্দু নেতারা। ছবি : কালবেলা

দেশে গণতন্ত্রের সত্যিকার চর্চা থাকলে সাম্প্রদায়িকতা থাকতো না বলে মন্তব্য করেছেন হিন্দু ধর্মীয় নেতারা। তারা বলেছেন, কক্সবাজারের রামু থেকে রংপুরের গঙ্গাচড়া, আজ পর্যন্ত একটি সহিংসতার ঘটনারও বিচার হয়নি। অথচ এসব ঘটনায় শুরু থেকেই দুর্বৃত্তদের বিচার হলে বাংলাদেশের চেহারাটা আজ অন্যরকম হতে পারতো।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট আয়োজিত ‘আসন্ন দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় হিন্দু নেতারা এসব কথা বলেন।

আলোচনায় লিখিত বক্তব্যে শারদীয় দুর্গাপূজায় সরকারি ছুটি তিন দিন (অষ্টমী, নবমী ও দশমী) করাসহ ৪ দফা দাবি জানান জাতীয় হিন্দু মহাজোটের (একাংশ) মুখপাত্র ও নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে। অন্য দাবিগুলো হলো- প্রত্যেকটি স্থায়ী ও অস্থায়ী পূজা মন্দিরে সরকারি খরচে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাসহ প্রতিটি মন্দিরে পূজার ১০ দিন আগে থেকে পূজা চলাকালীন সময় পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করা; গত বছরের মতো দুর্গাপূজায় সেনাবাহিনীর টহল দেওয়া এবং পূজায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা।

অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আসলাম চৌধুরী বলেন, সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু-এটা একটা আপেক্ষিক বিষয়। আমাদের দেশের নাগরিকদের বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জুলাই বিপ্লবের পর এখন আমাদের চিন্তা করতে হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা এই দেশটাকে কোন ডিজাইনে গড়ব। সবাইকে নিয়েই একটা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হবে। সব ধর্মই মানুষের কল্যাণের জন্য। সুতরাং সবাই যেন সুষ্ঠুভাবে-নির্বিঘ্নে ধর্ম পালন করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে সব ধর্মের মানুষই যেন সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারে, সে ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।

গণফোরাম ও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের রামু থেকে রংপুরের গঙ্গাচড়া, আজ পর্যন্ত একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির মধ্যে দেশটাকে নিয়ে গিয়েছিল শেখ হাসিনা। এখান থেকে আমাদের বের হতে হবে। প্রতিটি সহিংসতার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হতে হবে।

তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে- সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মঠ, মন্দির, মাজার, উপাসনালয়ের ওপর হামলা হচ্ছে। এসব ঘটনা যাতে আর না ঘটে, অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। মবোক্রেসি বন্ধ হতে হবে।

জামায়াতসহ ৭ দলের আন্দোলন প্রসঙ্গে সুব্রত চৌধুরী বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা এখনো শেষ হয়নি, তাহলে এখন আন্দোলন কেন? এই আন্দোলন ঘিরে সারা জাতির মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এতে মানুষ শঙ্কিত। মূলত রাজনীতিটাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আবারও রাজপথে আন্দোলনে নেমেছে কয়েকটি দল।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, একাত্তরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক সব আন্দোলন-সংগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদেরও ব্যাপক ত্যাগ-তিতীক্ষা রয়েছে। কিন্তু এ দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন, বাড়িঘর ও মন্দির ভাংচুর যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে। কোনো ঘটনারই বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির মধ্যে লালিত হচ্ছি আমরা। অথচ এসব ঘটনায় শুরু থেকেই দুর্বৃত্তদের বিচার হলে বাংলাদেশের চেহারাটা আজ অন্যরকম হতে পারতো।

তিনি বলেন, নির্বাচন মানেই হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এক দুঃস্বপ্ন। নির্বাচনের আগেও আমরা আক্রান্ত হয়েছি, নির্বাচনের পরেও আক্রান্ত হয়েছি। এসব সহিংসতার ঘটনা দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করছে আমাদের। দেশে গণতন্ত্রের সত্যিকারের চর্চা থাকলে সাম্প্রদায়িকতা থাকতো না। রাজনীতিবিদদের বলব- এই দুঃস্বপ্ন যাতে দূর হয়, সেই ব্যবস্থা করুন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বললেন, আমরা সবাই এক পরিবার। কিন্তু আমরা এর বাস্তবায়ন দেখছি না। এই সরকারের আমলে সারা দেশে ২৫শ’ এর মতো সহিংতার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনোটারই বিচার হচ্ছে না। আমরা এ দেশের নাগরিক। সকলে মিলে-মিশে থাকতে চাই। সেই সুন্দর পরিবেশ আমরা চাই। আমরা চাই, সহিংসতার অবসান হোক।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাস বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ সব মানুষের। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, সবার কথা শুনুন। আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ চাই, যেখানে কোনো বৈষম্য-সহিংসতা থাকবে না। আপনারা সেটা নিশ্চিত করবেন।

জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ড. প্রভাস চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি সন্তোষ দাশগুপ্ত (অমিথ), হিন্দু মহাজোটের রকি বড়ুয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীর যেসব সড়ক এড়িয়ে চলবেন আজ

আশাশুনি প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান, সম্পাদক আকাশ

বিড়ালের গলা কেটে হত্যার ঘটনায় নারীর বিরুদ্ধে জিডি

ঢাকার আবহাওয়া নিয়ে যা জানা গেল

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা, অতঃপর...

অক্টোবর / রেমিট্যান্স পাঠানোতে শীর্ষে যেসব দেশের প্রবাসীরা

চাকরি বদলের আগে যে কয়েকটি বিষয় ভাবা উচিত

আজ রাজধানীর কোথায় কী

আজ রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

শব্দের চেয়ে তিনগুণ গতির ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে রাশিয়া

১০

যুক্তরাষ্ট্রে কার্গো বিমান বিধ্বস্ত, নিহত বেড়ে ১১

১১

এবার বিএনপির ৫ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ

১২

ঢাকা-১৭ আসনে স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী কাজী এনায়েত উল্লাহ

১৩

৩১ কোটি টাকার অবৈধ জাল জব্দ

১৪

জিয়াউর রহমান নারীদের হাতের কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন : অমিত

১৫

নিখোঁজের আড়াই মাস পর মাথার খুলিসহ হাড় উদ্ধার

১৬

‌‌বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেবে : এনামুল হক

১৭

বিএনপিতে যোগ দিলেন রেজা কিবরিয়া

১৮

গুলিবিদ্ধ বিএনপি প্রার্থীকে দেখতে হাসপাতালে জামায়াতের প্রার্থী

১৯

ডেমরা থানা বিএনপির কমিটি গঠন

২০
X