টানা ছয় দিনের বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে শত শত হেক্টর জমির রোপা আমন ধান ডুবে গেছে। ১৭-১৮ বছরে যত্রতত্র হাজার হাজার পুকুর খননের কারণে ব্রিজ, কালভার্ট, পানিপ্রবাহের খাল-নালা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের ধান ডুবে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার চৌড়া এলাকার কৃষক লুৎফর রহমান জানান, জলাবদ্ধতায় পড়া সদ্য লাগানো রোপা আমন ধান অনেক জায়গায় ডুবে গেছে। এভাবে ধান গাছগুলো যদি তিন চারদিন ডুবে থাকে তখন পচে যাবে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি পর্যাবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, গত সোমবার থেকে তাড়াশ অঞ্চলে থেমে থেকে ভারি এবং মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৭০ মিলিমিটার। শনি থেকে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়ে ৬০ মিলিমিটার।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসের শুরু থেকে তালম, বারুহাস, নওগাঁ, তাড়াশ সদর, মাধাইনগর, দেশিগ্রাম ইউনিয়ন ও তাড়াশ পৌর এলাকায় চলতি বছর ১৩ হাজার ৯১০ হেক্টের বিভিন্ন জাতের রোপা আমন ধান লাগানো হয়েছে। বর্তমানে বিলের পানি কমে যাওয়া এসব অঞ্চলের আরও কিছু জমিতে লাগানো হচ্ছে রোপা আমন ধান।
বৃষ্টিপাতের কারণে তালম ইউনিয়ন এলাকার তালম পদ্মাপাড়া, নাগর পাড়া, মেলা পাড়া, গুল্টা, চৌড়া, রোকনপুর, কুন্দাশন, মাধাইনগর ইউনিয়ন এলাকার বিলাসপুর, পৌষার, মাদারজানি, কাস্তা, দেশিগ্রাম ইউনিয়ন এলাকার উত্তরশ্যামপুর, কাটাগাড়ি, মাছদক্ষিণা, তেঘরী, দোগারিয়া, নওগাঁ ইউনিয়ন এলাকার খালকুলা, বাঁশবাড়িয়া, বারুহাস ইউনিয়ন এলাকার বস্তুল, কুসুম্বী, মনোহারপুর, দিঘুরিয়াসহ অনন্ত ৪০ থেকে ৪৫টি গ্রামের ফসলি মাঠে হাঁটু সমান পানি জমে গেছে। যার ফলে প্রায় ৭০০ হেক্টর সম্মূর্ণ এবং প্রায় ৯০০ হেক্টর জমির আংশিক জমির রোপা আমন ধান ডুবে গেছে।
বস্তুল এলাকার কৃষক ফরিদুল ইসলাম জানান, তাড়াশে প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে গত ২০০৭ সালের পর থেকে বিভিন্ন ইউনিয়ন এলাকায় যত্রতত্র হাজার হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। পাশাপাশি পুকুর খনন কারণে ব্রিজ, কালভার্ট, খাল-নালা বন্ধ করে সড়ক সংগ্রন্ন বাড়ি ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করায় পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে অপেক্ষাকৃত নিচু ফসলি জমিতে।
মূলত, পানিপ্রবাহের প্রতিবন্ধকতার কারণে উজান থেকে ভাটিতে পানি নামতে পারছে না। তাই মাঠকে মাঠ উঠতি ও সদ্য লাগানো রোপা আমান ধান জলাবদ্ধতায় কোথাও পুরো আবার কোথাও আংশিক ডুবে গেছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শর্মিষ্ঠা সেন গুপ্তা বলেন, কয়েকদিনের বর্ষণে কিছু জমির ধান আংশিক ডুবে গেছে। আবহাওয়া ভালো হলে বেশি ভাগ জমির ধানের ক্ষতি হবে না।
মন্তব্য করুন