দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে গত কয়েক বছর পাটের আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় হতাশায় পড়েছিলেন চাষিরা। কিন্তু এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। দামও আশানুরূপ পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ ফিরেছে চাষিদের। বাজার এমন অবস্থা থাকলে আগামীতে পাটের আবাদ অনেকাংশে বাড়বে বলে মনে করছেন পাটচাষিসহ উপজেলা কৃষি দপ্তর।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬০ হেক্টর। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি হেক্টর জমিতে ১১ দশমিক ৯৩ বেল হিসেবে মোট ৭১০ বেল।
পাটচাষিরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে পাট আবাদ করেও আশানুরূপ দাম পাননি। অনেকেই পাট চাষ ছেড়ে অন্য ফসল আবাদে ঝুঁকে পড়েন। গত কয়েক বছর প্রতি মণ পাটের দাম প্রকার ও মানভেদে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ছিল। এ বছর পাটের চাহিদা অনেকাংশে বেড়েছে। তাই পাটের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এ বছর পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তবে ফুলবাড়ী উপজেলায় পাটের বেচাকেনার জন্য কোনো বাজার না থাকায় কৃষকদের যেতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী বিরামপুর উপজেলায়। এতে পাট নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিন জানা যায়, অন্য বছরে পাটের দাম না থাকায় উৎপাদন খরচও উঠাতে পারতেন না চাষিরা। এর পরও অনেকে জমির উর্বরতা ধরে রাখতে পাট চাষ করতেন। আবার অনেকে পাট চাষ ছেড়েও দিয়েছেন। পাটের দাম ভালো পাওয়ার পাশাপাশি জ্বালানি হিসেবে খড়ির দামও পাচ্ছেন আশানুরূপ। বর্তমানে প্রতি মণ খড়ি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে কৃষকের। এসব কারণে এলাকার অন্যান্য কৃষকও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন পাট চাষে। তাদের অভিমত পাট চাষে আবার সুদিন ফিরেছে।
উপজেলার খয়েরবাড়ি ইউনিয়নের মুক্তারপুর গ্রামের পাটচাষি নজরুল ইসলাম, মাহাবুর রহমান, আজিজুল হকসহ কয়েকজন বলেন, পাটচাষিদের চাহিদানুযায়ী দাম না পাওয়া, পানির অভাবে জাগ দেওয়া নিয়ে বিড়ম্বনাসহ ভালো বীজের সংকট ছিল। এসব কারণে পাটের চাষও কমে আসে। এ বছর পাটের ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। বলা চলে সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের সুদিন ফিরেছে। তবে ফুলবাড়িতে পাটের আড়ত কিংবা ক্রয়কেন্দ্র না থাকায় বিক্রি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। উৎপাদিত পাট বিক্রি করতে যেতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী বিরামপুর উপজেলায়। এতে অর্থ, সময় ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, পাট খুবই সম্ভাবনাময় একটি ফসল। অতীতে ব্যাপকভাবে পাট চাষ আবাদ হলেও নানা কারণে এখন কমে এসেছে। তবে এ বছর পাটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা আশানুরূপ দামও পাচ্ছেন। পাটের আবাদ বাড়াতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০ বিঘা জমিতে পাট চাষের জন্য ২০ জন কৃষকের মাঝে উন্নতমানের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন