কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাতিসা বালিকা বিদ্যালয়ের পেছনে অযত্ন অবহেলায় দাঁড়িয়ে আছে মঠ আদলে তৈরি ২০০ বছরের একমাত্র মন্দিরটি। স্থানীয়দের কাছে এটি মঠ হিসেবেই পরিচিত। একসময় এ মন্দিরে পূজারিদের ঢল নামত, পূজাকে ঘিরে মন্দিরের চারপাশে বসত মেলা। বিশুদ্ধচিত্তে, ভক্তি ও শ্রদ্ধায় পূজা প্রার্থনায় সরগরম থাকা মন্দিরটি কালের বিবর্তনে অযত্ন অবহেলায় এখন পরগাছার দখলে। ইট-সুরকি খড়ে পড়া ও পরগাছার শক্ত আলিঙ্গন যেন দ্রুতই বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন এই স্থাপনাটির।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকায় ইট-সুরকির গায়ে জন্মানো পরগাছা হয়েছে বিশাল গাছ। সব জায়গায় শেকড় জড়ানো। অপরিচিত কারও দূর থেকে বোঝার উপায় নেই যে এটি মন্দির। কোনোভাবে টিকে আছে মন্দিরের অবকাঠামো। পুরনো দেয়ালের অনেকাংশ থেকে খসে পড়েছে ইট। শত শত বছর আগে ইট-সুরকির গায়ে নির্মাণশ্রমিকদের নিপুণ হাতে করা নকশা হারিয়েছে শ্রী। চূড়ার ভাঙা অংশে বাসা বেঁধেছে পেঁচা। ভেতরের অন্ধকারে বসত চামচিকা, ইঁদুর, বাদুড় ও পোকামাকড়ের। আশপাশ দখল হয়ে গেছে বহু আগে। সম্প্রতি মন্দিরের দেয়ালঘেঁষে উঠেছে নতুন টিনের ঘর।
তবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি মন্দিরটির নির্মাণকাল। স্থানীয়রা জানায়, মন্দিরে দক্ষিণমুখী ছোট একটি লোহার দরজা ছিল, চুরি হয়ে গেছে সেটি। ভেতরে থাকা কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গটি ২০-২৫ বছর আগে রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যায়।
মন্দিরের নিকটবর্তী বাড়ির বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শতবর্ষী নারায়ণ ভট্টাচার্য বলেন, প্রায় ২০০ বছর আগে এই মন্দিরে শিবপূজা হতো। পূজার সময় মেলাতে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকত।
অপর বাসিন্দা ডা. রথিন ভট্টাচার্য বলেন, অনুমান করা হয় এ অঞ্চলে রাজা গোবিন্দ মানিক্যের শাসনামলে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। তখন এই অঞ্চলে মুসলমান বসতি ছিল না। আমাদের এই এক গ্রামে ১৬টি মন্দিরে দুর্গাপূজা হতো। আমার দাদুর কাছ থেকে শোনা কথানুযায়ী এই মন্দিরের আনুমানিক নির্মাণকাল প্রায় ২০০ বছর। মঠের আদলে তৈরি মন্দিরটিতে শিবপূজা হতো। দেশ বিভক্তির পর এখান থেকে অধিকাংশ হিন্দু পরিবার ভারত চলে যায়। তারপর অযত্ন অবহেলায় মন্দিরটি প্রায় ধ্বংসের পথে। নেওয়া হয়নি কখনো সংস্কারের উদ্যোগ।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা বাবু প্রমোদ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, স্থানীয় সনাতন ধর্মের নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব শেষ করে চৌদ্দগ্রামের বাতিসার ঐতিহাসিক এ মঠ আদলের মন্দিরটিকে সংস্কারের জন্য আবেদন করা হবে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সেক্রেটারি আশীষ সিংহ বলেন, সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে চৌদ্দগ্রামের সব কয়েকটি প্রাচীন মঠ ও মন্দির ধ্বংসের পথে। সরকারের কাছে আবেদন যেন এই প্রাচীন স্থাপনাগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মো. জামাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী কেউ যদি আসে অথবা আবেদন করে তাহলে আমরা এটি সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেব।
মন্তব্য করুন