মাদারীপুরের যুবক ফয়সাল মোড়ল (২২)। পাকিস্তানে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবানে (টিটিপি) যোগ দিয়ে সেনা অভিযানে নিহত বাংলাদেশি এ তরুণের পরিবার জানত তিনি দুবাইপ্রবাসী।
টিটিপির হয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তার মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না ফয়সালের পরিবারের সদস্যরা। তার মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
সরেজমিনে জানা গেছে, ফয়সাল মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ছোট দুধখালী গ্রামের আব্দুল আউয়াল মোড়লের ছেলে। বাবা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ইলেকট্রিশিয়ান, বড় ভাই আরমান হোসেন কাজ করেন দারাজের ডেলিভারিম্যান হিসেবে। মা চায়না বেগম গৃহিণী।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চে হিজামা সেন্টারে চাকরির কথা বলে দুবাই যাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন ফয়সাল। তবে পরে তিনি পাকিস্থানে পৌঁছান এবং সেখানে টিটিপিতে যোগ দেন। পরিবারের সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয় কোরবানির ঈদের আগে। এরপর আর কোনো যোগাযোগ ছিল না।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে পাকিস্থানের খাইবার পাখতুনখোয়ার কারাক জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ১৭ জন টিটিপি সদস্য নিহত হয়। এদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশি যুবক ফয়সালও। পাকিস্থানি গণমাধ্যমে নিহতদের ছবি প্রকাশের পর ফয়সালের পরিবার তাকে শনাক্ত করে।
নিহত তরুণের বড় ভাই আরমান মোড়ল তার ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।
ফয়সালের মা চায়না বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে যারা মেরেছে, তাদের বিচার চাই। আর আমি চাই, আমার ছেলের মরদেহ সরকার যেন দেশে ফিরিয়ে আনে।’
পরিবারের দাবি, প্রলোভন দেখিয়ে ফয়সালকে জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত করা হয়েছিল। তারা ফয়সালের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
ফয়সালের চাচা আব্দুল হালিম মোড়ল বলেন, ‘ভাতিজার বিষয়ে জানতে পারি গত ঈদুল আজহার সময়। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, সে আফগানিস্থান আছে। ২০২৪ সালের মার্চে দেশ ছাড়ার প্রায় ৬ মাস পরে সে তার বড় ভাই আরমান মোড়লের কাছে মোবাইল ফোনে কল করে বলে, দুবাই আছে এবং ভালো আছে। তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে জবাব দিত না সে।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পরিবার চাইলে নিহতের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করব। পাকিস্তান থেকে নিহত তরুণের লাশ ফেরত আনার যদি কোনো ব্যবস্থা থাকে, সেটাও করা হবে। একই সঙ্গে কেউ যাতে এমন নিষিদ্ধ সংগঠনে আর যুক্ত হতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।’
মন্তব্য করুন