কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এবতেদায়ি ও দাখিল মাদ্রাসার ১ম থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এই নির্দেশনার আওতায় থাকবেন।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান মারুফ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য, কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নাজমুল করিম, উপজেলা কৃষি অফিসার জয়নুল আলম তালুকদার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. লিয়াকত আলী খান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মমতাজ বেগম, কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক মো. ওবায়দুল্লাহ খানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। তারা বলছেন এর ফলে শিক্ষার্থীদের পড়া লেখার প্রতি আগ্রহ জন্মাবে। এবং মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্ত থাকার ফলে মানসিকভাবে সুস্থ থাকবে। মাঠের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ জন্মাবে।
অভিভাবক আমিন সাদী বলেন, এইটা একটা ব্যতিক্রম বিষয়। এখন যে তরুণ সমাজ তারা মাদকাসক্তের মতো মোবাইলে আসক্ত হয়ে নিজের জীবনকে ধ্বংস করছে, শিক্ষাকে ধ্বংস করছে, পারিপার্শ্বিকতাকে ধ্বংস করছে। মোবাইল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে এই তরুণ সমাজ বিপদগামী হবে না বলে আমি বিশ্বাস করি।
খায়রুল ইসলাম ভাষ্য মতে, সদর উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিকে সাধুবাদ জানাই একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। এবং শিক্ষকদের মাধ্যমে যেন এ বিষয়টি ক্লাসে ক্লাসে প্রচার প্রচারণা চালানো হয়। এতে করে মোবাইল ব্যবহারের যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া শিশু কিশোরদের উপর পড়ছে তা থেকে তারা দূরে থাকবে। এবং কাজটি আসলে হচ্ছে কিনা সেটি যেন মনিটরিং করা হয়।
কিশোরগঞ্জ মডেল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি ব্যত্ত্যয় না ঘটে তার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আমি মনে করি শিক্ষার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা যেভাবে মোবাইল বা ডিভাইসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার গুণগত মান পিছিয়ে যাচ্ছে। এ সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠঅভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুল হাসান মারুফ বলেন, উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে উপস্থিতিরা জানান স্কুলগুলোতে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীরা মোবাইল আসক্তি বেড়ে গেছে। বিভিন্ন অনলাইন জুয়াসহ অসামাজিক কার্যকলামে লিপ্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি কার্যকর রাখতে উপজেলা প্রশাসনের তদারকি টিম গঠন এবং নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষক ও অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মন্তব্য করুন