রংপুরের তারাগঞ্জে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটনের প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়কে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর তারাগঞ্জ জোনাল অফিসের দাবি, দীর্ঘদিনের বকেয়া বিল আদায়ের আইনানুগ প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায় লিটনের প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রংপুরের একটি প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিটনের তিন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজাররা অভিযোগ করেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ তাদের বিরুদ্ধে ‘ভূতুড়ে বিল’ দিয়েছে এবং কর্মকর্তারা ঘুষ দাবি করেছেন। তবে বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে লিটনের তিন প্রতিষ্ঠানের মোট ৭১ লাখ টাকার বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ বিল রয়েছে। এর মধ্যে এন.এন. কোল্ড স্টোরেজের ৩২ লাখ ৯৩ হাজার ২৬৮ টাকা, সাবেরা অটো রাইস মিলের ২৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩০ টাকা এবং সাবেরা ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারের ১৪ লাখ ৬ হাজার ১২১ টাকা বকেয়া রয়েছে।
তারাগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় গত জুনে লিটনের দুটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপরও মানবিক বিবেচনায় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুরোধে লিখিত মুচলেকার ভিত্তিতে পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়। এর প্রতিশোধ হিসেবেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিয়ম মেনে চলমান বিলের সঙ্গে পূর্বের বকেয়া বিল বিবিধ কলামে সমন্বয় করে পাঠানো হয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে এটিকে ভূতুড়ে বিল বলে প্রচার করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগও মিথ্যা। যদি কারও কাছে প্রমাণ থাকে, সিসিটিভি ফুটেজ উপস্থাপন করলেই আমি চাকরি ছেড়ে দেব।
তথ্য অনুসারে, সাবেক চেয়ারম্যান লিটন ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর তারাগঞ্জ জোনাল অফিস কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন কোনঠাসা অবস্থায় থাকায় বকেয়া বিল আদায়ে সক্ষম ছিল না। কিন্তু ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অফিসটি বকেয়া আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে লিটন চেয়ারম্যানের কর্মচারীরা নানা রকম হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করেন। শেষ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ তারাগঞ্জ জোনাল অফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জিএম মো. খুরশীদ আলম জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ সবসময় স্বচ্ছতা ও আইনের শাসন মেনে কাজ করে। আমাদের রেকর্ডে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে সবসময় কোটি টাকার উপরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকে। বিল আদায় কালে নানান ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়। বিগত সময়ে এন.এন. কোল্ড স্টোরেজ এর বকেয়া বিলের দায়ে সংযোগ বিছিন্ন করার উদ্যোগ নিলে কর্মচারী ও আলু গ্রাহকদের দিয়ে সড়ক অবরোধের হুমকি দেয়। বকেয়া বিলের জন্য আমাদেরও নানামুখী জবাবদিহিতা রয়েছে। এখনো লিটন চেয়ারম্যানের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৭১ লাখ টাকারও বেশি বকেয়া বিল রয়েছে।
মন্তব্য করুন