‘দেড় থেকে দুই বছর আগে ২০২৪ সালের মার্চে ফয়সাল দুবাই যাওয়ার কথা বলে দেশ ছাড়ে। দেশ থেকে বের হওয়ার সপ্তাহখানেক পরে যোগাযোগ করছিল। জানাইছিল ইন্ডিয়া আছে। সেখান থেকে দুবাই যাচ্ছে বলে তার বড় ভাইকে বলছিল’- পাকিস্তানে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবানে (টিটিপি) যোগ দিয়ে সেনা অভিযানে নিহত বাংলাদেশি তরুণের চাচা আব্দুল হালিম এমনটি বলছিলেন।
কিন্তু মাদারীপুরের তরুণ ফয়সাল মোড়ল (২২) দুবাই যাননি। তিনি গিয়েছিলেন পাকিস্তানে। এ খবর পরিবার না জানলেও আগেই জেনেছিল বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। ফয়সালের চাচা হালিম বলেন, ‘গত কোরবানির ঈদের সময় মাদারীপুর থানা থেকে পুলিশ ও ডিবি পুলিশ বাড়িতে আসছিল। ফয়সালের কথা জিজ্ঞেস করছে। ফয়সাল কোথায় থাকে জিজ্ঞেস করলে বলছিল দুবাই থাকে। কিন্তু তারা বলে সে পাকিস্তান আছে জানি কি না?’
পুলিশ ও গোয়েন্দাদের বাড়িতে আসার পর পরিবারের সন্দেহ হতে থাকে। কিন্তু তবুও তারা পাকিস্তানে ফয়সালের অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। অবশেষে সেনা অভিযানে তার নিহতের মধ্য দিয়ে বিষয়টি খোলাসা হলো। এরই সঙ্গে জানা গেল, ফয়সাল কারও খপ্পরে পড়ে নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে যায়।
পরিবারের দাবি, প্রলোভন দেখিয়ে ফয়সালকে জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত করা হয়েছিল। তারা ফয়সালের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
ফয়সালের মা চায়না বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে যারা মেরেছে, তাদের বিচার চাই। আর আমি চাই, আমার ছেলের মরদেহ সরকার যেন দেশে ফিরিয়ে আনে।’
ফয়সালের চাচা আব্দুল হালিম আরও বলেন, ‘২০২৪ সালের মার্চে দেশ ছাড়ার প্রায় ৬ মাস পরে সে তার বড় ভাই আরমান মোড়লের কাছে মোবাইল ফোনে কল করে বলে, দুবাই আছে এবং ভালো আছে। তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে জবাব দিত না সে।’ কার সাথে, কীভাবে গেছে পরিবার এসব বিস্তারিত জানতে চাইলে তা ফয়সাল পাশ কাটিয়ে যেতো বলে জানান তার চাচা।
ধীরে ধীরে পরিবারের সন্দেহ বাড়ে। চাচা দাবি করেন, কোরবানি ঈদের আগে ফয়সালকে টাকাপয়সা পাঠানো ও দেশে চলে আসার কথা বলে পরিবার। কিন্তু ফয়সাল দেশে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলে, তাকে অনেক টাকা খরচ করে নেওয়া হয়েছে, সে আসতে পারবে না।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার কারাক জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ১৭ জন টিটিপি সদস্য নিহত হয়। এদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশি যুবক ফয়সালও। পাকিস্তানি গণমাধ্যমে নিহতদের ছবি প্রকাশের পর ফয়সালের পরিবার তাকে শনাক্ত করে।
নিহত তরুণের বড় ভাই আরমান মোড়ল তার ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। বিষয়টি তার গ্রামে বেশ আলোড়ন তুলে। এখন গ্রামের প্রায় সবখানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ফয়সালের জঙ্গিবাদে জড়ানোর খবর। মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কেউ যাতে এমন নিষিদ্ধ সংগঠনে আর যুক্ত হতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।’
মন্তব্য করুন