চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে প্রভাষক নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী ১০ প্রার্থী।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক বরাবর অভিযোগটি দেওয়া হয়। এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর একই বিষয়ে উপাচার্যকে অভিযোগ দেওয়া হয়।
অভিযোগকারীদের দাবি, ১৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নিয়োগ বোর্ড ছিল পক্ষপাতদুষ্ট ও নিয়মবহির্ভূত। তারা বলেন, নিয়োগ বোর্ডে বিভাগের কোনো বিশেষজ্ঞ শিক্ষককে রাখা হয়নি এবং বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির অনুমোদন ছাড়াই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এমনকি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের একজন শিক্ষককে বিশেষজ্ঞ করা হলেও তিনি ফারসি বিষয়ে কোনো ডিগ্রিধারী নন।
অভিযোগে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে বিশেষজ্ঞ করা হলেও তার শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। লিখিত পরীক্ষার সময় খাতা মূল্যায়নকারীরা পরীক্ষার হলে উপস্থিত থেকে উত্তরপত্র দেখেছেন ও প্রশ্ন বুঝিয়ে দিয়েছেন—যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত।
প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের ভাইভার জন্য ডাকা হয়েছে। অথচ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগে সিনিয়র অধ্যাপক থাকা সত্ত্বেও কাউকে নিয়োগ বোর্ডে রাখা হয়নি।
অভিযোগকারীরা দুদকের কাছে দাবি জানিয়েছেন, স্বজনপ্রীতিমূলক এ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হোক। পাশাপাশি বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির অনুমোদন নিয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি অনুযায়ী কোনো বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হলে প্রথমে বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সভায় তা অনুমোদন করতে হয়। সভায় অনুমোদিত হলে তা রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠাবেন বিভাগের সভাপতি। পরবর্তীতে রেজিস্ট্রার বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উপাচার্যের সম্মতি নিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবেন। তবে বিভাগটির ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিভাগের শিক্ষকেরা।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের একজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। বিভাগে যোগ্য শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ বোর্ডে এমন শিক্ষককে রাখা হয়েছে, যার সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ডিগ্রি নেই। যাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের অধীনে এমফিল করে।
তিনি আরও বলেন, নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় আবেদন করেছিলেন ৪৩ জন। তবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ২৯ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন ১৩ জন। তবে এদের কাউকে পাস করানো হয়নি। আমরা এ নিয়োগ বোর্ড বাতিল করে নতুন বোর্ড বসানোর জন্য উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছি। সর্বশেষ দুর্নীতি দমন কমিশনেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত বা প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো উপায় নেই। কারণ নিয়োগ পরীক্ষা দুই ধাপে হয়ে থাকে। লিখিত পরীক্ষায় যারা ৬০ শতাংশ নম্বর পায়, তাদের ভাইভা ও প্রেজেন্টেশনের জন্য ডাকা হয়। ফারসি বিভাগেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। এখানে অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রশ্নই আসে না।
বিভাগে ‘যোগ্য’ শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও অন্য বিভাগের শিক্ষককে নিয়োগ বোর্ডে বিশেষজ্ঞ সদস্য রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভাগ থেকে নিয়োগ বোর্ডে রাখার মতো কেউ নাই। বিভাগে শিক্ষক থাকলেই তিনি যে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে থাকবেন বা থাকতে পারবেন, এমনটা না। বিধিবদ্ধ নিয়ম অনুসরণ করেই নিয়োগ বোর্ড তৈরি করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাশেম রেজা কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম সংক্রান্ত একটা অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে গত ১৯ এপ্রিল ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে দুই পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ১৯ সেপ্টেম্বর নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য করুন