খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে চলমান উত্তেজনা ও সহিংসতার মধ্যেই ঘটনার নতুন মোড় নিয়েছে। ওই কিশোরীর মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত মেলেনি। স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার ১০টি সূচকের প্রতিটিতে ‘স্বাভাবিক’ উল্লেখ রয়েছে।
মারমা এই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর খাগড়াছড়িতে ব্যাপক উত্তেজনা, অবরোধ আর সহিংসতা ছড়িয়েছে; গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারির মধ্যে গুলিতে তিনজনের প্রাণ গেছে।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের গাইনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জয়া চাকমা, ডা. মীর মোশাররফ হোসেন ও ডা. নাহিদ আক্তারের সমন্বয়ে মেডিকেল টিম পরীক্ষা করে। চিকিৎসক দলটির প্রধান খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) জয়া চাকমা বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর মেডিকেল পরীক্ষার ফলাফলে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি।’
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, প্রতিবেদন মঙ্গলবার পেয়েছি। ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ধর্ষণের অভিযোগ থেকে খাগড়াছড়িতে ছড়ানো সহিংসতাকে ‘পরিকল্পিত’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিত সহিংসতায় তিনটি জীবন ঝরে গেছে, যা খুবই দুঃখজনক।’
উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালায় প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পরে ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি ক্ষেত থেকে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে। পরে তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে শয়ন শীল (১৯) নামে এক তরুণকে আটক করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় খাগড়াছড়িতে ব্যাপক বিক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যা একসময় সহিংসতায় রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় এবং অতিরিক্ত সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এর পরও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। ১৪৪ ধারার মধ্যেই জেলার গুইমারায় ঝরে যায় তিন প্রাণ।
এদিকে খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালায় মারমা শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে গত রোববার গুইমারা সহিংসতার ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।
মন্তব্য করুন