সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনা থামছেই না। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এক একটি সড়ক দুর্ঘটনা নিঃস্ব করে দিচ্ছে পুরো পরিবার। চালকদের প্রতিযোগিতা, বেপরোয়া গাড়ির গতি এবং পথচারীদের অসাবধানতার কারণে প্রতিদিন সড়কে ঝরছে প্রাণ। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রায় একই সময়ে ওসমানীনগর, বিয়ানীবাজার, হবিগঞ্জ ও দোয়ারাবাজারে মর্মান্তিক চারটি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। এতে ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের সড়কে ঝরেছে ৬ প্রাণ।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে ওসমানীনগরের তাজপুরে প্রাইভেটকারচাপায় মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের তাজপুর এলাকার ইলাশপুরস্থ ভার্ড চক্ষু হাসপাতালের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজার এলাকার শুক্কুর আলীর স্ত্রী সালাম বেগম (৫২) ও তার ছেলে আব্দুল কাইয়ুম (৩২)। তারা ভার্ড চক্ষু হাসপাতালের পাশে একটি বাসায় ভাড়াটে থাকতেন। ঘটনার সময় রাস্তা পার হতে গিয়ে তারা বেপরোয়া গতির প্রাইভেটকারের নিচে চাপা পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানন, সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রাইভেটকার রাত সাড়ে আটটার দিকে ভার্ড চক্ষু হাসপাতালের সামনে গেলে মহাসড়ক পার হতে থাকা সালমা ও তার ছেলেকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন। খবর পেয়ে তাজপুর ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ দুটি উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতলে প্রেরণ করে।
এ ছাড়া রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিয়ানীবাজারের সিলেট-জকিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে সিএনজি, মালবাহী ট্রাক, অটোরিকশা ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১ জনের মৃত্যু ও তিনজন আহত হয়েছেন। আহত তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মৃত্যু হয় অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য নয়ন মিয়ার। তিনি উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের মামনপুর (মোহাম্মদপুর) গ্রামের মৃত নুরুল আমিনের ছেলে। রোববার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার দোয়ারাবাজার-বোগলাবাজার সড়কের মোল্লাপাড়া পয়েন্টে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নয়ন মিয়া স্থানীয় বোগলাবাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে পেছন থেকে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। এ সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। গুরুতর অবস্থায় সেখান থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে রেফার করা হয়। পথিমধ্যে উপজেলা সদরের নৈনগাঁও গ্রামে পৌঁছামাত্র মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
হবিগঞ্জের ইকরাম আঞ্চলিক সড়কে যাত্রীবাহী টমটম উল্টে চান মিয়া (৫৫) নামে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪ জন। তাদের উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত চান মিয়া জেলার বানিয়াচং উপজেলার উত্তর সাঙ্গর গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে।
সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. সম্রাট তালুকদার কালবেলাকে বলেন, সিলেট-জকিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের বিয়ানীবাজারের লালপুল ব্রিজের পাশে এবং ওসমানীনগরে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতলে পাঠানো হয়েছে। আহতরা হাসপাতলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গাড়ি জব্দ করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
হাইওয়ে সিলেট জোনের পুলিশ সুপার শহিদ উল্লাহ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ মানুষের অসচেতনতা। সড়কে উঠেই মানুষ দৌড় দিয়ে দেয়। মানুষকে সচেতন করার জন্য ট্রাফিক পুলিশ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করছে।
মন্তব্য করুন