দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা পোস্ট অফিসের ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনটি মেরামতের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বেহাল রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে পোস্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আশঙ্কা করেছেন।
সরেজমিনে খানসামা পোস্ট অফিসে দেখা যায়, ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে কখনো মাথার ওপর, কখনো যন্ত্রপাতির ওপর খুলে পড়ছে পলেস্তারা। দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার কিংবা মেরামত না করায় বর্তমানে পোস্ট অফিসের ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অফিসের ভেতরে গিয়ে ভবনটির জীর্ণদশা দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবে। ছাদ নির্মাণের যে রডগুলো ব্যবহার করা হয়েছে পলেস্তারা খুলে পড়ে সেগুলো সব দেখা যাচ্ছে রডগুলোতে জং ধরেছে। অফিসের ভিতরে ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে অফিসিয়াল কাজকর্ম চালাচ্ছেন এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যেকোনো মুহূর্তে ভবনটি ধসে ঘটতে পারে প্রাণহানিসহ বড় কোনো দুর্ঘটনা। সংস্কারের অভাবে ভবনটির গায়ে শ্যাওলা পড়ে গেছে। ছাদের কোনো কোনো স্থানে পলেস্তারা নেই। ভিতর থেকে ছাদের দিকে তাকালে মরিচা ধরা লোহার রডগুলো চোখে পড়ে। ভবনের দ্রুত সংস্কার করা খুব জরুরি।
পোস্ট অফিসে সেবা নিতে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে পোস্ট অফিসে আসা-যাওয়া করি। প্রতি মাসে পোস্ট অফিসে আসতে হয় টাকা নিতে কিন্তু সব সময় ভয়ে থাকতে হয়। কখন ওপরের ছাদ ধসে পড়ে।’
পোস্ট অফিসে সেবা নিতে আসা শেখ নেছারুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সরকারি দপ্তরগুলোর খারাপ অবস্থা তা জানতাম কিন্তু এত পরিমাণ খারাপ তা আমাদের জানা ছিল না। সরকারি দপ্তরগুলো যে খুবই অবহেলিত, তা এই পোস্ট অফিস ভবনে এলে স্পষ্ট বোঝা যায়। আমরা পোস্ট আসলে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি যে কখন বুঝি ভবনের ছাদ ভেঙে আমাদের ওপর পড়ে। যেদিন ভবন ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে তখন সরকারের টনক নড়বে। অতিদ্রুত পোস্ট অফিসের এই ঝুঁকিপূর্ণ মরণফাঁদ ভবনটি ভেঙে আধুনিক মানের একটি ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন তা না হলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ পোস্ট অফিসে কোনো সেবা নিতে আসবে না।
উপজেলা পোস্টমাস্টার মো. দহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা পোস্ট অফিসে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে আসছি। ছাদের পলেস্তারা খুলে পড়ে অফিসের অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গরমের সময় আমরা ভয়ে ফ্যান চালু করি না কারণ ফ্যান কখন যে মাথার ওপর কিংবা সেবাগ্রহীতাদের মাথার ওপর খুলে পড়ে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমতাবস্থায় আমরা সেবার মানও বাড়াতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কার্যক্রমগুলো না করলেই নয় সেগুলো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চালিয়ে আসছি। পোস্ট অফিসের প্রতি সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করতে চাইলে দ্রুত পরিত্যক্ত এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে একটি আধুনিক মানের নিরাপদ পোস্ট অফিস ভবন নির্মাণ করা জরুরি। তা না হলে এক সময় সরকারি এই গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর থেকে সাধারণ মানুষ পুরোপুরি মুখ ঘুরিয়ে নেবেন। কতবার যে ভবনের এমন অবস্থার কথা কাগজে-কলমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি। শুধু আশ্বাসই এখন আমাদের প্রধান ভরসা।’
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল প্রদীপ কুমার জানান, খানসামা উপজেলার পোস্ট অফিসটি জরাজীর্ণ এটা আমরা জানি, এটা আমাদের রিপোর্টে আছে। গত অর্থবছরে আমরা বাজেট পাইনি যার ফলে কিছু করতে পারিনি। কেন্দ্র এ বিষয়টি অবগত আছেন। আশা করছি এই অর্থবছরে কাজ হয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন