মহিন উদ্দিন রিপন, টঙ্গী (গাজীপুর)
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘আমরা গ্যাস নিয়ে ব্যবসা করছি, আপনি পারলে কিছু করুন’

সিএনজি পাম্প। ছবি : কালবেলা
সিএনজি পাম্প। ছবি : কালবেলা

গাজীপুরের টঙ্গী শহরে গ্যাস সংকট এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। কয়েক মাস ধরেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে। এতে শুধু গৃহস্থালিই নয়, শিল্পক্ষেত্রও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, একাধিক সিএনজি পাম্প থেকে অবৈধভাবে গ্যাস সংগ্রহ করে ব্যবসা চালানো হচ্ছে। আফতাব সিএনজি পাম্প, আলম এশিয়া সিএনজি পাম্প ও মার্কো সিএনজি পাম্পে পাইপলাইন থেকে সরাসরি গ্যাস টেনে নেওয়া হচ্ছে।

এসব পাম্পে গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি করার কাজও চলে নিয়মবহির্ভূতভাবে। একেকটি কাভার্ড ভ্যানে ৫০ থেকে ৭০টি সিলিন্ডার রাখা হয়, প্রতিটি ভ্যানে প্রায় ২ লাখ টাকার গ্যাস ভর্তি করা হয়। এভাবে সংগৃহীত গ্যাস বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যেই।

এসব কার্যক্রম কেবল আইনভঙ্গ নয়, ভয়াবহ ঝুঁকিও তৈরি করছে। আবাসিক এলাকার ভেতরে এভাবে শত শত সিলিন্ডার মজুত থাকলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। কোনো বিস্ফোরণ ঘটলে আশপাশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভয়াবহ প্রাণহানির সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এ বিষয়ে আলম এশিয়া সিএনজি পাম্পের ম্যানেজার নুরু সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বাধা দেন। এমনকি হুমকিও দেন এবং বলেন, ‘আমরা গ্যাস নিয়ে ব্যবসা করছি, আপনি পারলে কিছু করুন।’

এ বক্তব্য স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলার ইঙ্গিত বহন করে। শহরের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের স্বাভাবিক চাপ পাচ্ছেন না।

গৃহিণী রুনা বেগম বলেন, ‘সকালবেলা ছেলেমেয়েদের নাশতা তৈরি করতে পারি না। অনেক সময় তারা না খেয়েই স্কুলে যায়।’

শুধু পরিবার নয়, শিল্পক্ষেত্রও বিপাকে পড়েছে। টঙ্গীর বিসিক শিল্পাঞ্চলের কয়েকজন উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, উৎপাদন প্রক্রিয়া বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

হা-মীম গ্রুপের ম্যানেজার মো. কায়েস বলেন, ‘গ্যাসের চাপ না থাকার কারণে আমাদের শিপমেন্ট ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে, কাঁচামাল নষ্ট হচ্ছে।’

স্বাভাবিকভাবে চাপ থাকার কথা ১৫ পিএসআই; কিন্তু বর্তমানে তা অনেক সময় শূন্যের কোঠায় নেমে আসছে। ফলে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন না, শিপমেন্ট বাতিল হচ্ছে এবং কোম্পানিগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে।

তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের টঙ্গী অঞ্চলের ম্যানেজার মেজবাহ উদ্দিন স্বীকার করেছেন যে, নিয়মিত অভিযান চালানো হলেও একটি চক্র বারবার অবৈধ সংযোগ স্থাপন করে। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘যদি তিতাসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে প্রশ্ন থেকে যায়— কেন এসব সংযোগ বারবার স্থাপিত হচ্ছে এবং কেন কার্যকর পদক্ষেপ টেকসই হচ্ছে না?

এখন স্পষ্ট, টঙ্গীর গ্যাস সংকট কেবল প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়, বরং প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির ফল। এটি একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। গৃহস্থালির কাজ থেকে শুরু করে শিল্পকারখানার উৎপাদন— সবখানেই বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে প্রশাসন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। অবৈধ সংযোগগুলো দ্রুত বিচ্ছিন্ন করা এবং পুনঃস্থাপন ঠেকানো জরুরি। পাশাপাশি সঠিক নিয়মে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে টঙ্গীর মানুষের ভোগান্তি যেমন বাড়বে, তেমনি অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল পুলিশ সদস্যসহ ২ জনের

রাজশাহীতে ৬০ হারানো ফোন ফিরিয়ে দিল পুলিশ

বাঙলা কলেজ ছাত্রদলের ৪ নেতা বহিষ্কার

চবিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘সামুদ্রিক মৎস্য ও নীল উদ্ভাবন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন

অবৈধ ফোন বেচাকেনা নিয়ে বিটিআরসির নির্দেশ

সংরক্ষিত বনের গাছ বিক্রির অভিযোগ বিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

আইপিএলে দল পেলেন না বাংলাদেশের কেউই

‘১০ লাখ মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর একই’

প্রতিবন্ধী নারীর ভাতার টাকা যায় আ.লীগ নেতার পকেটে

নির্বাচন করবেন কি না জানালেন প্রেস সচিব

১০

আবারও পেছাল বিপিএল

১১

যে গ্রামে শত বছর ধরে টিকে আছে শাঁখারি শিল্প

১২

শয়তানের নিশ্বাস ছড়িয়ে ধর্ষণ

১৩

স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ইয়াবা পাচারকালে ধরা

১৪

মগবাজারে বহুতল ভবনে আগুন

১৫

ফজলুর রহমানের বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

১৬

কয়েক কোটি টাকা নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা উধাও

১৭

হংকংয়ে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু বেড়ে ৭৫

১৮

হৃদয়ের একার লড়াইয়ের পরও বাংলাদেশের বড় পরাজয়

১৯

সিমিউই-৬ সাবমেরিন কেবল প্রকল্পে নতুন পিডি জাকিরুল আলম 

২০
X